TRENDING:

Mohun Bagan Day: ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন ১১ জন বাঙালি, সবুজ-মেরুন আবেগের নাম মোহনবাগান

Last Updated:

বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে মাঠে খেলতে নামেন ১১ জন বাঙালি তরুণ। লক্ষ্য তাঁদের তখন একটাই, হেস্টিংসের মাথায় ইংরেজদের পতাকা উড়ছে, সেটাকে নামিয়ে দেশের পতাকা তোলা।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
রাহী হালদার, হুগলি: সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল। এই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির বহু আবেগ। এবং সেই আবেগের আরেক নাম মোহনবাগানও বটে। সেই আবেগের অন্যতম একটি দিন ২৯ জুলাই, মোহনবাগান দিবস। ১৯১১ সালের এই দিনেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১১ জন দামাল বাঙালি ছেলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন ফুটবল খেলায় ইংরেজদের হারানোর। বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে মাঠে খেলতে নামেন ১১ জন বাঙালি তরুণ। লক্ষ্য তাঁদের তখন একটাই, হেস্টিংসের মাথায় ইংরেজদের পতাকা উড়ছে, সেটাকে নামিয়ে দেশের পতাকা তোলা।
advertisement

১৯১১-র সেই ঐতিহাসিক মোহনবাগান একাদশের অন্যতম একজন ছিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার মনমোহন মুখোপাধ্যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে গোলটি অভিলাষ ঘোষ করেছিলেন তার পাস বাড়িয়েছিলেন মনোমোহন মুখোপাধ্যায়। সেই সময় গোটা দেশের লোক তাকিয়ে শুধু ওই ১১ জনের দিকে । বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা ইংরেজদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সেই দিন পা দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছিল মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের। তবুও গোটা মাঠে ইংরেজদের পা থেকে চুম্বকের মতো বল কেড়ে নিচ্ছিলেন প্রতিবার তাঁরা। ১৯১১-র সেই ঐতিহাসিক জয় আজও প্রতিটি বাঙালির মনে জ্বলজ্বল করছে। স্বর্ণাক্ষরে ভারতের ও ফুটবলের ইতিহাসে লেখা রয়েছে হাবুল, শিবদাস, মনমোহনদের নাম।

advertisement

আরও পড়ুন- কলকাতা ফুটবল লিগে গড়াপেটার অভিযোগ ! তদন্তের জন্য পুলিশকে চিঠি আইএফএ-র

View More

মনমোহন মুখোপাধ্যায় চাকরি করতেন তৎকালীন রাইটার্সের পিডব্লিউডি ডিপার্টমেন্টে। খেলার দিন সকালে তিনি উত্তরপাড়ার গঙ্গার ঘাটের স্নান সেরে রওনা দেন অফিসে। অফিসে তিনি জানান তার সেই দিন একটি জরুরী কাজের জন্য ছুটি লাগবে। যেহেতু ইংরেজদের সময় এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধেই তিনি মাঠে খেলতে নামছেন তাই তিনি অফিসকে জানাতে পারেননি আসল বিষয়। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে কলকাতা মাঠে তিনি পৌঁছন পায়ে হেঁটেই। অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ি মনমোহনকে ডাকতেন ‘মনু’ বলে। ডানদিকের মাঝমাঠ থেকে খেলা পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের উপরেই। মনমোহনের বংশধর, তাঁর নাতি নিখিল মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি লোক মুখে শুনেছেন মানুষজন মনে করত মনমোহনবাবুর হয়তো দুটি ফুসফুস রয়েছে। তিনি একাই নিজেদের ডিফেন্স থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট পর্যন্ত ছুটে বেড়াতেন। আর চুম্বকের মতো বিরোধীদের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তার প্রধান কাজ।

advertisement

আরও পড়ুন– জবাফুলের মতো লাল চোখ নিয়ে ভিড় ডাক্তারখানায়; রইল কনজাংটিভাইটিস প্রতিরোধের বেশ কিছু উপায়

সেই দিনের খেলার বিবরণ একটু মনে করা যাক, মাঠ জুড়ে লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রাইফেলস-এর সঙ্গে মাঠে খেলতে নামছে অবিভক্ত বাংলার মোহনবাগান একাদশ। মাঠ জুড়ে এতটাই ভিড় যে দর্শকদের খেলার ফলাফল জানানোর জন্য ঘুড়ি উড়িয়ে ফলাফল জানাতে হয়েছিল। প্রথম দিকে ইস্ট ইয়র্কশায়ারই জিতছিল। রাজেন সেনগুপ্ত প্রতিপক্ষের জ্যাকসনকে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষ ফ্রি-কিক পায়, মোহনবাগান গোলরক্ষক হীরালাল মুখার্জি সতীর্থ খেলোয়াড়দের প্রত্যেককেই দূরে সরে যেতে বললেন , সকলেই সরে গেলেন , কিন্তু একমাত্র ভূতি সুকুল দাঁড়িয়ে ছিলেন এই আশায় যে , শটটি তিনি হয়তো আটকে দিতে পারবেন ৷

advertisement

মনমোহন মুখোপাধ্যায়

জ্যাকসনের ফ্রি-কিক সুকুলের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে বলটি গোলে ঢুকে যায়, ব্রিটিশ সমর্থকরা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান খেলে একেবারে দৈত্যের মতো। ইস্ট ইয়র্কের রক্ষণ ভাগ একা কানু রায়ের আক্রমণকেই প্রতিহত করতে পারছিল না ৷ কানু রায় ও হাবুল সরকারের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া ছিল ৷ তাতে বিপক্ষের ডিফেন্স পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছিল ৷ খেলা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে শিবদাস আচমকা ডান দিকে ছুঁটে গিয়ে লেফট ব্যাককে ডজ করে দুর্দান্ত একটা শট নেন, ইস্টইয়র্কের গোলকিপার ক্রেসি সম্পূর্ণ পরাস্ত হন। প্রথম গোলের ঘুড়ি আকাশে উড়ল মোহনবাগানের নামে। এই সাফল্যে বাঙলি সমর্থকরা এমনই চিৎকার করেছিলেন, তাঁদের গলা ভেঙে গিয়েছিল খেলা শেষ হওয়ার মাত্র দু’মিনিট আগে ৷ মনমোহন মুখোপাধ্যায় একটি চমৎকার পাস দেন অভিলাষ ঘোষকে, অভিলাষ দু’জন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে কাটিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং হাঁটতে-হাঁটতে গোলে বল ঠেলে দিলেন। খেলার অন্তিম ফলাফল হয় ২-১। প্রথমবার ইংরেজদের পরাজয় আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে পড়ে সমস্ত দর্শকরা।

advertisement

মোহনবাগানের সেই ঐতিহাসিক জয়ের আজ ১১২ বছর অতিক্রম করল। কিন্তু আজও প্রত্যেক বাঙালির মনে মোহনবাগানের সেই জয় বারবার নাড়া দিয়ে যায়। হুগলির উত্তর পাড়ায় রয়েছে মনমোহনবাবুর বাড়ি। উত্তরপাড়ার টিপটপ বাসস্ট্যান্ডের সামনেই দেখা যাবে তাঁর মূর্তি। তাঁর নামে রয়েছে উত্তরপাড়ায় একটি মাঠও। মোহনবাগান দিবসের দিন প্রতি বছর তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন জেলার প্রতিটি ফুটবলপ্রেমী মানুষ।

বাংলা খবর/ খবর/খেলা/
Mohun Bagan Day: ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন ১১ জন বাঙালি, সবুজ-মেরুন আবেগের নাম মোহনবাগান
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল