কেএ টেকচাঁদ যাদব (৮২) মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার ক্যান্ট এলাকায় একটি জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে থাকেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক হকি খেলোয়াড় ছিলেন। মেজর ধ্যানচাঁদের শিষ্য ছিলেন তিনি। এছাড়া হকি খেলোয়াড় এবং রেফারি মোহর সিং-এর পরামর্শদাতাও ছিলেন। ১৯৬১ সালে হকি ম্যাচে যে ভারতীয় দল হল্যান্ডকে পরাজিত করেছিল, টেকচাঁদ সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুন- মুখ দেখিয়ে ভারতীয় দলে সুযোগ পায় রাহুল ! বোমা ফাটালেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে টেকচাঁদ জানান, ১৯৪০ সালের ৯ ডিসেম্বর ক্যান্ট এলাকায় তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা দুধের ব্যবসা করতেন। টেকচাঁদ যখন স্কুলে পড়তেন, তখন তিনি খেলোয়াড়দের হকি খেলা দেখতেন। সেখান থেকেই তিনি হকি খেলার অনুপ্রেরণা পান।
টেকচাঁদ প্রথমে গাছের ডাল কেটে হকি তৈরি করেন এবং বন্ধুদের সাথে খেলতে শুরু করেন। টেকচাঁদ বলছিলেন, তাঁর বাবা যখন এই খেলায় ছেলের আগ্রহ দেখেছিলেন, তখন তিনি তাঁকে একটি আসল হকি স্টিক কিনে দিয়েছিলেন।
টেকচাঁদের ভাল খেলা দেখে তাঁকে ডিএইচএ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ডিস্ট্রিক্ট হকি অ্যাসোসিয়েশনের দলে খেলার সময় তিনি ভোপাল, দিল্লি, চণ্ডীগড় সহ অনেক শহরে টুর্নামেন্ট খেলেন। একের পর এখ ম্যাচে দুরন্ত পারফর্ম করেন তিনি।
টেকচাঁদ বলছিলেন, ১৯৬০ সালে মেজর ধ্যানচাঁদ এমআরসি সাগরে এসেছিলেন। তিনি সেখানেই থেকে যান। সেই সময় তিনি সাগর ও জবলপুরের হকি খেলোয়াড়দের ডেকে প্রশিক্ষণ দেন। সেই কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে টেকচাঁদও ছিলেন।
মেজর ধ্যানচাঁদ সেখানে ৩ মাস ছিলেন। খেলোয়াড়দের এমন টিপস দেন তিনি যে তাঁদের জীবন বদলে যায়। এক বছর পর ভোপালে একটি আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টে অনেক দেশের হকি দল অংশ নেয়। এই সময় টেকচাঁদ ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। সেই ম্যাচটি ছিল হল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচটি বড় ব্যবধানে জেতে ভারতীয় দল।
আরও পড়ুন- দৌড়, সাঁতার, টিটি থেকে ক্রিকেট! বিশ্বজয়ের পর তিতাসের জন্য অপেক্ষা করছে আইপিএল
জীবন সংগ্রাম তার হাত থেকে হকি স্টিক কেড়ে নেয়। টেকচাঁদ বলছিলেন, তাঁর যত মেডেল, সার্টিফিকেট বা পুরস্কার ছিল সবই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে তিনি দুঃখিত নন। কারও কাছে কোনও অভিযোগ নেই। তবে দেশের হকির দুর্দশা দেখে তিনি দুঃখিত। তিনি মনে করেন, ভারতে খেলাধুলার বাণিজ্যিকীকরণের পর থেকে হকি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন দুবেলা ভাল মতো খাবার জোটে না ভারতীয় দলের হয়ে খেলা এই খেলোয়াড়ের। রোজই কেউ না কেউ একবেলা তাঁকে খেতে দেন। তাঁর নিজের উপার্জন, সঞ্চয় বলে কিছুই নেই।