ঝড় জল উপেক্ষা করে টোটো বোঝাই করে এদিক ওদিক পৌঁছে দেন প্যাসেঞ্জারদের। ভাল নাম সুচিত্রা হলেও সকলের কাছে ‘পুতুন দি’ নামেই পরিচিত এই মহিলা টোটো চালক। জানলে অবাক হবেন, তৎকালীন সময়ে পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন সুচিত্রা ওরফে ‘পুতুন দি’। বর্তমানে টোটো চালিয়েই চলছে তাঁর সংসার। বাঁকুড়া শহরের সানবাঁধা এলাকার বাসিন্দা সুচিত্রা মুখোপাধ্যায়। বাড়ির সামনেই একটি টিনের চালের তলায় রাখা থাকে তাঁর জরাজীর্ণ সবুজ রঙের বিখ্যাত টোটো।
advertisement
টোটো চালকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে টোটোর বাজারে যথেষ্ট প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতার মধ্যে একজন মহিলা হয়ে ২০১৫ সাল থেকে টিঁকে থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। নতুন যাঁরা টোটো চালাতে আসেন ‘সিনিয়ার দিদির’ কাছে টিপস নেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, যাত্রীরা, বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা পুতুন দি’র জীবন যুদ্ধ দেখে অনুপ্রাণিত হন বৈকি। এমনই একজন মহিলা যাত্রী ফুলবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরতা পিঙ্কি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা মহিলারা কিছু সমস্যা হলেই বিরক্ত হয়ে যাই যেমন বাস না পেলে অথবা লাইনে দাঁড়াতে হলে। সেই মর্মে বিচার করলে উনি (পুতুন দি) রোদ,ঝড়, জল উপেক্ষা করে দিনের পর দিন এভাবে টোটো চালিয়ে উপার্জন করছেন। ওনাকে স্যালুট জানাই।”
পঞ্চায়েতে সমিতির খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন সুচিত্রা মুখোপাধ্যায়। সেই সময় কেমন ছিল পঞ্চায়েত জানতে চাওয়ায় তিনি জানান, অর্থের পরিমাণ অনেকটাই কম ছিল। সেই কারণেই টোটো চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে বর্তমানে। ওই একই টোটো স্ট্যান্ডের অপর এক টোটো চালক, প্রশান্ত চক্রবর্তী জানান, “এভাবেই মহিলারা এগিয়ে আসুক।”
আসন্ন নারী দিবসের প্রাক্কালে বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা সুচিত্রা মহিলাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অনেকেই দাবি করেন তিনিই হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা টোটো চালক। অজুহাত নয়, পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁকুড়ার রাস্তায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এখনও শক্ত হাতে টোটোর হ্যান্ডেল ধরে আছেন পুতুন দি।
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়