বাকি দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। ছোটো মেয়ে বেলাকে নিয়ে সরকারি পাট্টা পাওয়া জায়গায় বাড়িতে থাকছিলেন বৃদ্ধা। সেই মেয়ের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে বিধবা কমলা দেবীকে। ১০ বছর বাড়ি ছাড়া কমলা দেবী শুরুতে গ্রামেরই একটি মুড়ি মিলে রাঁধুনির কাজ করে সেখানেই থাকতেন। বেশ কয়েক বছর ওই মুড়িমিলটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ মিলের এককোনায় ভাঙাচোরা চিলেকোটা বৃদ্ধার বর্তমান ঠিকানা। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। কনকনে শীতের রাতে কোনও রকমে এখন রাত কাটাচ্ছেন তিনি। মিল বন্ধ হওয়ার পর নিজের স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইলেও মেয়ে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। বৃদ্ধা বলেন,’মেয়ের অত্যাচারে জামাই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্য মেয়েকে বিয়েও করে নেয়। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে রাখতে চায়নি তাদের ঘরে। সেই সময় আমরা মেয়েকে বাড়িতে এনে নিজেদের সঙ্গে রেখেছিলাম। সেই মেয়েই আমাকে বাড়ি ছাড়া করেছে।’
advertisement
নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর সোমবার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও’র দ্বারস্থ হয়েছেন বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধা কমলা পাত্র। একা মেয়ে নয়, বিডিও অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মেয়ের ছেলে ও বৌমার নামেও। মেয়ে বেলা বাগ ও তার ছেলে বৌমা আনুমানিক ১০ বছর আগে নাকি মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। সেই থেকে লোকের দুয়ারে কোনওক্রমে দিন কাটছে পাড়া প্রতিবেশীদের সাহায্যে। প্রতিবেশীরা বেশ কয়েকবার তাকে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করলে, তাদেরও গালিগালাজ ও হুমকির মুখে পড়তে হয়। মেয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিজের ঘরে ফিরে শান্তিতে বসবাসের আবেদন জানিয়ে বিডিওকে লিখিত জানিয়েছেন কমলা দেবী।
আরও পড়ুন: সহকর্মীর ফাঁদে গাইঘাটার যুবক, কাঁকিনাড়ায় আটকে রেখে ২ লক্ষ টাকা দাবি! ফোনেই ফাঁস রহস্য
অভিযুক্ত মেয়ে বেলা বাগ জানিয়েছেন, শ্বশুরঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি উঠেছি। আমার যাওয়ার অন্য কোনও জায়গা নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর মা খিটখিটে হয়ে যায়। কথায় কথায় খোঁটা দেয়। আমি তা সহ্য করতে না পেরে দু’চার কথা বলি। তবে নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক না।’
অন্যদিকে বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছেন পাড়া প্রতিবেশীরা। তারাও বলছেন বৃদ্ধার অভিযোগ সত্য।এমনকি বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধার হয়ে মেয়েকে বোঝাতে গিয়ে তারাও মেয়ের রোষের মুখে পড়েছেন। প্রতিবেশী প্রসেনজিৎ কুশারী,আকতার মন্ডলরা বলছেন,’আমরা বলতে গেলে ওর মেয়ে আমাদেরই তেড়ে আসে,গালমন্দ করে।এমনকি আমরা এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হুমকিও দেয়। এই বয়সে মায়ের সঙ্গে এই অত্যাচার মেনে নেওয়া যায়না।আমরাও চাই প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নিক।যাতে ও তার স্বামীর ঘরে ফিরে শান্তিতে থাকতে পারে।’
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
ঘটনা প্রসঙ্গে বিডিও উৎপল পাইক জানান,’আমি একটা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে বৃদ্ধা জানিয়েছেন তার মেয়ের অত্যাচারে জামাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। মেয়ে বাপের বাড়িতে এসে থাকে। এখন মেয়ের অত্যাচারে তিনিও বাড়ি ছাড়া। পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত হবে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।





