শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্যদের মধ্যে ১৬ জন সন্ন্যাসী এবং প্রায় ৩০ জন গৃহী শিষ্য ছিল। ৩০ জন গৃহী শিষ্যের মধ্যে একজন হলেন নবগোপাল ঘোষ। হাওড়ার বিখ্যাত লালবাড়ি বা ঘোষ বাড়ি অথবা স্বামী বিবেকানন্দের মাথার পাগড়ি থাকাকে কেন্দ্র করে বাড়িটির নামকরণ হয়েছে হাওড়ার পাগড়ি বাড়ি। এই পাগড়ি বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠাকুরের গৃহী শিষ্য নবগোপাল ঘোষ এবং তার অর্ধাঙ্গিনী নিস্তারিণী দেবী। তাঁরা কলকাতার বাদুড় বাগানে বসবাস করতেন।
advertisement
১৮৮৬ সালে ঠাকুরের মৃত্যুর পর ১৮৯০ সালে হাওড়ার হুগলি নদী লাগোয়া রামকৃষ্ণপুরে একটি বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় নন্দগোপাল বাবু এবং নিস্তারিণী দেবী। জানা যায়, কলকাতার বাদুড় বাগান ছেড়ে হাওড়ায় বাড়ি তৈরির মূল কারণ ছিল, শুধুমাত্র গ্রামের নাম ‘রামকৃষ্ণপুর’ হওয়ার কারণে। তিনি মনে করতেন, বাসস্থানের পরিচয় দিতে গিয়ে ঠাকুরের নাম বলা হবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে হাওড়ায় বাড়ি তৈরি করেন নবগোপাল বাবু। এরপর বাড়ি তৈরীর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে তিনি ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নেন। বাড়ির উপরে ঠাকুরের একটি ঘর তৈরি করেন। যেখানে ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন মনস্থির করেন। ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমন্ত্রণ জানান, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শীর্ষ স্বামী বিবেকানন্দকে। সবে শিকাগো মহা ধর্ম সম্মেলন সেরে দেশে ফিরেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। আমন্ত্রণ পেয়ে নদীপথে এসে রামকৃষ্ণপুর ঘাট হয়ে ঘোষ বাড়িতে খালি পায়ে পৌঁছে ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান তিক্ত সম্পর্কের ফায়দা তুলতে চাইছে বাংলাদেশ! ইসলামাবাদকে বিশেষ বার্তা ঢাকার
স্বামী বিবেকানন্দ ঘোষ বাড়িতে পৌঁছে ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে তার সঙ্গে থাকা ঠাকুরের অস্থি রেখে দেন নন্দগোপাল বাবুর বাড়িতে। শিকাগো ধর্ম সম্মেলন থেকে সদ্য ফিরেছেন। তারপরই হাওড়ার ঘোষ বাড়িতে তিনি হাজির হয়েছিলেন ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে হাজির হবার পর, তার সঙ্গে থাকা ঠাকুরের অস্থি রেখে দিয়েছিলেন মন্দিরে। ঠাকুরের অস্থির কাছেই তার মাথার পাগড়ী থাকবে। একথা বলে নিস্তারিণী দেবীর হাতে তাঁর মাথার পাগড়ী তুলে দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই থেকে আজও হাওড়ার লালবাড়ি বা ঘোষ বাড়িতে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের সেই ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি। এই পাগড়ি দেখতে বছরে একটা দিন অর্থাৎ মাঘী পূর্ণিমার দিন অগণিত মানুষ এখানে এসে উপস্থিত হয়।
আরও জানা যায়, বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার আগে এক বছর মঠের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পন্ন হয়েছে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর এর বিখ্যাত লাল বাড়ি বা ঘোষ বাড়ি থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ। তিনি প্রায় এক বছর হাওড়ার এই বাড়ি থেকে বেলুড় মঠের যাবতীয় কাজকর্ম চালিয়েছিলেন বলেই জানা যায়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান হাওড়ার লালবাড়ি বা ঘোষ বাড়ির চতুর্থ পুরুষ সুব্রত ঘোষ মহাশয়, তিনি আরও জানান লালবাড়ি বা ঘোষ বাড়ির ইতিহাস বিভিন্ন বইতে লেখা রয়েছে। এই বাড়ির অধিকাংশ ইতিহাস মানুষের অজানা। পূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে তিনি একটি বই রচনার উদ্যোগ নিয়েছেন।
রাকেশ মাইতি





