কথায় আছে, জিলপির আড়াই প্যাঁচে জিভে জল। টসটসে রসে ভরা মুচমুচে জিলিপির প্যাঁচের প্রেমে পড়েন নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া রীতিমতো দুষ্কর। সেই জিলিপির সাইজ ঠিক কতটা বড় হতে পারে? কত হতে পারে এক একটার দাম? সেই সাইজ ও স্বাদে বহুবছর ধরে রীতিমতো কিস্তিমাত করে আসছে বাঁকুড়ার প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়া। নিয়ম মেনে চলতি বছরও ভাদু পুজো ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে কেঞ্জাকুড়া বাজারের দোকানে দোকানে তৈরী হচ্ছে জাম্বো জিলিপি। যার এক একটির ওজন দুই থেকে চার কিলো। ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কিলো দরে বিশালাকার এই জাম্বো জিলিপিতে কামড় বসাতে গেলে পকেটের কড়ি যে একটু বাড়তি খরচ হবে তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে।
advertisement
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বিরিয়ানির দোকানে ঘটে গেল ভয়ঙ্কর ঘটনা! ছুটে এল সিভিক, তারপর…
বাঁকুড়া জেলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়া। এই কেঞ্জাকুড়ায় অতীত কাল থেকেই ভাদ্র সংক্রান্তিতে ঘটা করে ভাদু পুজো হয়। ধুমধাম করে হয় বিশ্বকর্মা পুজোও। ভাদু পুজোগুলির মধ্যে চলে আয়োজনের অলিখিত প্রতিযোগিতা। কথিত আছে সেই প্রতিযোগিতায় অন্যদের পিছনে ফেলে দিতে একসময় মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বড় বড় জিলিপির বরাত দিত কেঞ্জাকুড়ার ভাদু পুজোর উদ্যোক্তারা। আর তাতেই ধীরে ধীরে জিলিপির আকার বাড়তে বাড়তে দুই থেকে চার কেজিতে গিয়ে ঠেকে। পরবর্তীতে এলাকায় ভাদু পুজোর রমরমা কমলেও জিলিপির আকার আর কমেনি। বরং জাম্বো জিলিপির মহিমা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায় এমনকী বাঁকুড়া জেলার বাইরেও। ফলে ভাদু পুজো আর হোক বা না হোক, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি এলেই কেঞ্জাকুড়া গ্রামের মিষ্টি প্রস্তুতকারকেরা রাত দিন এক করে তৈরী করতে শুরু করেন জাম্বো জিলিপি। জাম্বো জিলিপি তৈরীর পদ্ধতি সাধারণ জিলিপির মতোই। রঙের ব্যবহারে বিধি নিষেধে রঙে কোপ পড়লেও বাকি সবই রয়েছে বিদ্যমান।
মূলত চালের গুঁড়ো ও বেসনের সঙ্গে ময়দা সহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে তা দিয়ে বিশেষ শিল্পিক কায়দায় প্যাঁচ কষে তেলে ভাজা হয়। ভাজা জিলিপি চিনির রসে ডুবিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় জাম্বো জিলিপি। তাক লাগানো উপহার হিসাবে অপরকে দিতে অথবা পরিবারের সকলে মিলে ভাগ করে খাওয়ার উদ্যেশ্যে জিলিপি কিনতে এই সময় বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত সহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ এইসময় ভিড় জমান কেঞ্জাকুড়া বাজারে। জাম্বো জিলিপির আকাশ ছোঁয়া চাহিদা এই সময় মুখের হাসি চওড়া করে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।