বড় বড় গাছের নিচে ছোট্ট এক চিলতে টালির চালের বাড়ি। এই বাড়িতেই বৃদ্ধ মা, আহত সব বন্যপ্রাণীদের নিয়ে রামুর বসবাস। শৈশব থেকেই বন্যপ্রাণীদের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা। যত বয়স বেড়েছে পশু পাখিদের প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ব আরও গভীর হয়েছে।
হাওড়া’র ডোমজুড় মাকড়দহ গ্রামের রামচন্দ্র বাগ, এলাকার মানুষের কাছে রামু নামে এক ডাকে পরিচিত। এলাকায় নিঃস্বার্থভাবে পশু পাখির উদ্ধার বা যত্নে রামু অদ্বিতীয়। নিজের জীবনের আগে পরের নেই পরোয়া। মানুষের বাড়িতে বিষধর সাপ প্রবেশ কিংবা কোনও প্রাণী আহত হবার খবর এলেই সাত-পাঁচ না ভেবেই দৌড়ে যায় রামু। খবর এলেই দ্রুত সেই স্থানে পৌঁছে , আহত প্রাণীদের উদ্ধার করে আনেন রামু। তারপর তার সেবা-যত্ন করে আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া এই তার পণ।
advertisement
তাঁর এই কর্মকাণ্ড বন দফতর বা বন কর্মীদের নির্দেশ মতই পালন করে রামু। হাওড়া জেলা ননফরেস্ট জোন হলেও বিভিন্ন বন্য প্রাণী\’র বসবাস। দ্রুত নগরায়ন, হু-হু বাড়ছে কলকারখানা। যে কারণে বন্যপ্রাণীদের আহত ও দুর্ঘটনায় পড়ার ঘটনা বেশি জেলায়। জেলা বন বিভাগ ও পরিবেশ প্রেমীদের বন্যপ্রাণ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বন্যপ্রাণ উদ্ধার ও আহত খবর এসে পৌঁছয় তাঁদের কাছে। সেই রকমই হাওড়া জেলার বড় অংশ জুড়ে বন দফতরের সহযোগিতায় বন্যপ্রাণ উদ্ধার কার্য করে রামু। কখনও বন দফতরের গাড়িতে আবার কখনও বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে বন্যপ্রাণী উদ্ধার করতে বেড়িয়ে পরে সে। এলাকায় বন্যপ্রাণ রক্ষায় বন দফতরের অধিকাংশ কাজ দায়িত্বর পালন করে রামু। তার বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা হাতে পায় রামু। তা থেকেই আহত প্রাণীদের চিকিৎসা ও খাবার খরচ এবং নিজের সংসার চলে।
এ প্রসঙ্গে রামচন্দ্র বাগ (রামু) জানায়, তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। পাখি পোষার সখ করে দুটো পায়রা পোষা। তাঁদের যত্নপরিচর্চা করতে করতে পশু পাখির প্রতি ভালবাসা। আহত পাখি কুকুর উদ্ধার করে সেবা যত্ন শুরু হয়। এরপর আহত বন্যপ্রাণী এবং মানুষের বাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় সমস্ত ধরনের বন্যপ্রাণী ও বিষধর সাত উদ্ধার করছি বন দফতরের সহযোগিতায়।
সংসারে দারুন অর্থ কষ্ট, এক কথায় সংসার প্রায় অচল অবস্থা। অন্য কাজে যুক্ত হলে হয়ত অভাব ঘুচবে, স্বাচ্ছন্দ ভাবে সংসার চলবে। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের ছেড়ে অন্য কোন কাজে মন বসেনি। এদের উদ্ধার সেবা যত্ন সময় কাটান, এই কাজে রয়েছে মানসিক তৃপ্তি। তবে রামুর মা চাইছেন যদি বন দফতরের অধীনে রামুর ছোট্ট একটা কাজ জোটে তাহলে অন্তত নিশ্চিন্ত হতে পারি।





