হুগলির বাসিন্দা সুনীতা রাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মাস কয়েক আগে ওড়িশার ভদ্রকের রোহিত রায়ের সঙ্গে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে স্বপ্ন দেখেছিলেন জীবন গড়ার। তার স্বামী নিজেদের জন্য ভদ্রকেই স্বপ্নের একটি বাড়ি বানাচ্ছিলেন। হুগলির কোন্নগরে কানাইপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে শুরু করেছিলেন তাদের জীবনযাত্রা। তাদের ইচ্ছা ছিল ওড়িশায় বাড়ি তৈরি হয়ে গেলেই সেখানে গিয়ে বাকি জীবন বসবাস করবেন দুজনে। কিন্তু অভিশপ্ত সেই রাত মুহূর্তের মধ্যে চুরমার করে দিল তাদের সব স্বপ্ন। ওড়িশা থেকে হুগলিতে ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী বছর ২৫ এর সুনীতা রাও।
advertisement
আরও পড়ুন: সোনার দোকানে এভাবে চুরি! এমনও সম্ভব? হাবড়ার ভিডিও দেখে চমকে উঠছে সকলে
মৃত সুনীতা রাওয়ের ভাই আনন্দ রাও জানান, সুনীতা তার মাসির মেয়ে। তার জামাই বাবু রোহিতের সঙ্গে, একটি বিয়ে বাড়ি থেকে তাদের পরিচয় হয় দুজনের। গত বছর জানুয়ারি মাসে বাড়ি থেকে পালিয়ে রোহিতের সঙ্গে বিয়ে করেন সুনীতা। সেই কারণে পরিবারের সকলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হয় তার দিদিকে। সুনীতার বাবা বিজয়া রাও অনেক ছোট বয়সে পরলোক গমন করেন। মায়ের সঙ্গে তিনি চাতরা কালিবাবুর ঘাট এলাকায় থাকতেন। যেহেতু মেয়ের প্রেমের বিয়ে মেনে নেয়নি পরিবার, তাই বিয়ের পর থেকেই সুনীতার সঙ্গে সব সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওড়িশায় পৌঁছন তাদের পরিবারের লোকজন।
আরও পড়ুন: ১ যুবক সহ তিন নাবালককে ঘরে আটকে এ কী করলেন তৃণমূল নেতা! তুঙ্গে বিতর্ক
এই বিষয়ে রিষড়ার মারওয়ারি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য অশোক দেওটিয়া বলেন, স্বামীর সঙ্গে ভদ্রকে গিয়েছিল সুনীতা। সেখানে তাদের এক বন্ধুর বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল তারা দুজনে। ভদ্রকে তার স্বামী রোহিত একটি বাড়ি তৈরি করছিল জায়গা কিনে। সেই কাজ দেখাশোনার জন্য সে ভদ্রকে থেকে যায়। স্ত্রী কে হুগলির বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেন তুলে দিয়েছিলেন। ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এর এসি টু এর যাত্রী ছিলেন এই মহিলা। দুর্ঘটনার পরের দিন থেকেই তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার বিকালে খবর আসে ওড়িশা থেকে তার দেহ চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে। এখান থেকে তার পরিবারের সদস্যরা ওড়িশা পৌঁছালেও দেহ এখানে নিয়ে আসার মতো অবস্থায় ছিল না, তাই ওড়িশাতেই সৎকার করতে হয়।
সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকে তার স্বামী রোহিত একেবারে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। ভদ্রক থেকে কিছুক্ষণ আগেই স্ত্রীকে ট্রেনে তুলে বলেছিলেন, বাড়ি পৌঁছে ফোন করতে। সেই দেখাই যে শেষ দেখা হবে তা মেনে নিতে এখনো পারছেন না তিনি। ইতিমধ্যেই ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে একটি বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে। ট্রেন দুর্ঘটনায় জীবন হানির ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য।
——– রাহী হালদার