পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুকের অদূরেই রয়েছে, বর্ধিষ্ণু গ্রাম কেলোমাল। এই গ্রামে ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে চারটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো। একটি হল এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজো। অন্য দুটি হল অমল সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো এবং শঙ্কু সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো, এছাড়াও রয়েছে ভট্টাচার্য বাড়ি বা ডাক্তার বাড়ির দুর্গাপুজো। এলাকার চারটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোয় রয়েছে আলাদা আলাদা ইতিহাস। প্রথম পুজো প্রচলনের আলাদা আলাদা লোককথা। ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন বামাচরণ ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন জমিদার ঘোষবাড়ির পুরোহিত। কথিত আছে গরিব ব্রাহ্মণের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয় দেবীদুর্গার স্বপ্নাদেশে।
advertisement
ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজোর বিষয়ে এই বাড়ির বর্তমান কর্তা জানান, ”গ্রামে ঘোষবাড়ি ও দুই সরকার বাড়ি মিলিয়ে তিনটি দুর্গাপুজো চলছে কয়েক শতাব্দী ধরে। এই তিনটি বাড়িতে দুর্গাপুজো হলেও কায়স্থ হওয়ার কারণে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় না। মাকে দেয়া হয় কাঁচা চালের নৈবেদ্য। কথিত, ঘোষবাড়ির পুরোহিতকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী তাঁকে অন্নভোগ দেওয়ার জন্য। পুরোহিত বামাচরণ তাঁর নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে পরের বছর থেকে। দেবী মাকে কলার তরকারি ও কলা গাছের থোড় রান্না করা পদ দিয়েই ভোগ অর্পণ করেন। সেই থেকেই এই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে এর বয়স প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি। প্রতিষ্ঠাতার প্রচলিত নিয়ম মেনে আজও এখানে দেবীর অন্নভোগে নিবেদন করা হয় থোড়ের পদ।”
সময়ের ব্যবধানে ভাগ্যের চাকা অনেকটাই ঘুরেছে। পূর্বপুরুষ দরিদ্র ব্রাহ্মণ থাকলেও বর্তমান প্রজন্ম চিকিৎসাবিদ্যায় খ্যাতি লাভ করেছে। এলাকার মানুষের মুখে মুখে ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো এখন ডাক্তার বাড়ির পুজো হিসেবে পরিচিত। আগের থেকে পুজোর জাঁকজমক কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু পুজোর চার দিন দেবী মায়ের ভোগে দেওয়া হয় অন্যান্য রান্না করা পদের পাশাপাশি কলার তরকারি এবং কলা গাছের থোড় রান্না করা পদ। ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো পুরনো রীতিনীতি মেনেই চলছে। এই বাড়ির দুর্গাপুজোয় অন্য একটি নিয়ম হল দশমীর দিন ঠাকুর নিরঞ্জনের পালা সাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সকলে উপবাস করেন। দেবী প্রতিমা নিরঞ্জনের পর সেই উপবাস ভঙ্গ করা হয়।