তবে সম্প্রতি এক অন্য ছবি দেখা গেল মঙ্গলকোটের নিগন বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে হঠাৎই দেখা মিলল একটি ভাদু দলের। তাঁদের সুরেলা কণ্ঠে যখন ভাদু গান ভেসে উঠল, তখন চারপাশে ভিড় জমালেন অসংখ্য মানুষ। কারও হাতে মোবাইল ক্যামেরা, কেউবা মগ্ন হয়ে গেলেন স্মৃতিচারণায়। পুরনো দিনের হারানো গানের সুর শুনে অনেকেই আবেগে ভেসে গেলেন। ভাদু দলের সদস্য নির্মল মণ্ডল বলেন, “আমরা সবাই চাষবাস করে খাই। সাধারণ ভাবে বিকেলের দিকেই গান গাইতে বেরোই। আজ মন হল তাই সকালে বেড়িয়েছি। আমরাও আনন্দ পাই আবার গান গেয়ে সাধারণ মানুষকেও আনন্দ দিই। ভাদ্র মাসের শেষ অবধি এই গান আমরা করব।”
advertisement
ভাদু দলের সদস্যরা জানালেন, তাঁরা কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বাননাগরা গ্রামের বাসিন্দা। মোট ১০ জন রয়েছেন এই দলে। ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই তাঁরা বেরিয়েছেন গান গাইতে। প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাঁরা গাইছেন ভাদুমণির গান। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে ছোট স্পিকার, মাইক্রোফোন, শ্রীখোল আর খঞ্জনি। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ মজার সাজে সেজে নেচে-গেয়ে আরও আনন্দ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে।
দলের সদস্যদের কথায়, ভাদু গান করার পিছনে তাঁদের কোনও স্বার্থ নেই। নিঃস্বার্থভাবেই তাঁরা এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন শুধু পুরোনো ঐতিহ্যটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তাঁদের বিশ্বাস, ভাদুমণির স্মৃতি ও বাংলার এই লোকসংস্কৃতি যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে, তাই তাঁদের এই প্রয়াস।
ভাদ্র মাসের দু’মাস আগে থেকেই তাঁরা গানের অনুশীলন শুরু করেছিলেন। লেখকের কাছ থেকে গান কিনে এনে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পরই তাঁরা পথে নামেন। একসময় ভাদ্র মাস এলেই ভাদু দলের লোকেরা গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন, আর মাসশেষে ঘরে ফিরতেন। আজ সেই ছবি প্রায় হারিয়ে গেলেও, কাটোয়ার এই কয়েকজন মানুষ এখনও নিজেদের গ্রাম্য রীতি টিকিয়ে রেখেছেন। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই মনে করছেন হয়তো এর মাধ্যমেই আবার নতুন প্রজন্মের কাছে ভাদু গানের চর্চা পৌঁছবে। আবারও গ্রামীণ সংস্কৃতির মাটির গন্ধে ভরে উঠবে বাংলার গ্রাম্য জনপদ।