ছোটবেলায় সংসারের অভাব থেকেই শুরু তাঁর এই পেশা। অভাবী সংসারে পড়াশোনা বেশি এগোতে পারেননি। তখনই হাতে তুলে নেন খবর কাগজের বান্ডিল। সেই শুরু—যে যাত্রা আজও থামেনি। ভোর চার’টের দিকে ঘুম থেকে উঠে তিনি প্রথমে দিঘা স্টেশনে যান, সেখান থেকে সংগ্রহ করেন বিভিন্ন পত্রিকার বান্ডিল। তারপর সাইকেলে চেপে আবার কখনও পায়ে হেঁটে তিনি হোটেল থেকে হোটেলে ঘুরে বেড়ান। ঘাম ঝরে, হাঁপ ধরেও যায়, তবুও তিনি থামেন না। তাঁর কথায়, “এই কাজই আমার জীবন। যতদিন শরীর চলবে, ততদিন খবর কাগজই পৌঁছে দেব মানুষের হাতে।”
advertisement
তবে এখন সময় বদলেছে। ডিজিটাল যুগে হাতে মোবাইল মানেই খবর, তাই ছাপা কাগজের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগের মতো আর বিক্রি হয় না, ফলে সংসার চালানোও কঠিন হয়ে উঠেছে কমলবাবুর। মাসে কোনওরকমে কয়েক হাজার টাকাই হাতে আসে। তবুও তিনি কাজ ছাড়তে চান না। বলেন, “সংসার চলছে কষ্টে, কিন্তু যদি এই কাজটা ছেড়ে দিই, মনে হবে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। এই কাগজই তো আমার পরিচয়।” স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার। ছেলেমেয়েরা বড় হলেও বাবার এই পরিশ্রম তাঁদের অনুপ্রেরণা দেয়।
আরও পড়ুনঃ ৫ মিনিটও সময় লাগবে না! প্রেশার কুকারে শুধু ২ সিটিতে বানিয়ে ফেলুন পারফেক্ট দুধ চা, রইল রেসিপি
দিঘার বহু পুরোনো হোটেল মালিকরা আজও বলেন, “যেদিন পেপার কাকু আসে না, সেদিন সকালে যেন কিছু একটা ফাঁকা লাগে।” পর্যটকরাও হাসিমুখে তার কাছ থেকে খবর কাগজ কিনে নেন। অনেকেই তাঁকে ভালবেসে চা খাওয়ান। এই ছোট ছোট মানবিক মুহূর্তই তাঁর প্রেরণা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যেতে চান তিনি। কমল লোচন পন্ডা যেন এক প্রতীকী সংগ্রাম, নিষ্ঠা আর কর্মনিষ্ঠার প্রতিচ্ছবি। দিঘায় আজও সকাল হয় পেপার কাকুর সেই খবর কাগজের গন্ধে।





