সুন্দরবনের ভুবনেশ্বরীর ৫২ জন মৌলি পরিবার মিলে ২০১৯ সালে তৈরি করেন সমবায় সমিতি। তৎকালীন ডিএফও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সন্তোসা গুব্বি মহাশয়ের উদ্যোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদফতরের অন্তর্গত তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে মৌমাছির বাক্স বসানোর কাজ শুরু হয় পরীক্ষামূলকভাবে। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ না করে তারা বনি ক্যাম্প, চুলকাঠি ও কলস দ্বীপের সংরক্ষিত এলাকায় মৌমাছির বাক্স বসিয়ে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে তাদের ব্যবসা ব্যাপক গতি পায়।
advertisement
২০২৩ সালে দিল্লিতে বসেছিল জি টোয়েন্টির আসর। যেখানে ৪২ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত হয়েছিলেন। আর সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল উপহার সামগ্রীতে ভরা চন্দন কাঠের বাক্স। যে উপহার তালিকায় ছিল কাশ্মীরের কেশর থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের সুস্বাদু চা ও সুন্দরবনের মধু। বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৫২ টি মৌলি পরিবারের তৈরি হওয়া সমবায় সমিতির বনফুল মধুকেই সিলেক্ট করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর এরপরেই সুন্দরবনের মধুর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে বেশ কয়েক গুণ। তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালুও বেড়ে গিয়েছে।
আর শীত পড়তেই সুন্দরবনের বনফুল মধুর চাহিদা তুঙ্গে। অনলাইন কিংবা তাদের স্টোর থেকে বিক্রি হচ্ছে এই মধু। কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করা এই ব্যবসার এখন টার্নওভার দাঁড়িয়েছে বছরে আড়াই কোটি টাকা। আর সুন্দরবনের মধুর ব্যবসার রমরমার পুরো ক্রেডিটটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই দিচ্ছেন সুন্দরবনের মৌলিরা। এই মধু বিক্রি করে এখন প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন মৌলি পরিবারগুলি।
সুন্দরবনের খলশে, তোরা, বাণী, কেওড়া ও গড়ান-সহ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ গাছের ফুলের মধু যা সর্দি কাশি থেকে শুরু করে কাটা ও পোড়ায় অনিবার্য ওষুধ বলেই দাবি করছেন সুন্দরবনের মৌলেরা। বনদফতর ও রাজ্য সরকারের কাছে তাদের আবেদন আরও বেশি করে মৌলিদের ঝুঁকিহীনভাবে মধু সংগ্রহ করার জন্য আরও কিছু সংরক্ষিত পর্যটন কেন্দ্রতে মৌমাছির বাক্স বসানোর অনুমতি দেওয়া হোক। এছাড়াও মৌমাছির বাক্সগুলি প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকার যাতে তাদের মৌমাছির বাক্সের বিমা করানোর ব্যবস্থা করেন সেই দাবিও তুলছেন সুন্দরবনের মৌলেরা।
সুমন সাহা