এ ছবি আমাদের সকলেরই ভীষণ চেনা। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরণে সাদা ধুতি, গায়ে পটবস্ত্র। মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজো অঙ্গনে বসে চণ্ডীপাঠে নিমগ্ন রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুভার সামলানো ছোটখাটো চেহারার মানুষটি। প্রতি বছরেই ধরা পড়ত এই চেনা চিত্র। পুজো এলেই বীরভূমের মিরাটি গ্রামে মুখার্জি ভবনের সামনে ভিড় করত সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা। এলাকা মুড়ে ফেলা হত নিরাপত্তায়। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার বলয়ে হয়ত নিজেদের গ্রামকেই চিনতে পারতেন না বাসিন্দারা। তবু, শতবর্ষ প্রাচীন এই পুজোয় এসে প্রণব হয়ে যেতেন একেবারে বাড়ির ছেলেটি। নিয়ম-নিষ্ঠায় ঘেরা প্রতিটি আয়োজন সারতেন পরিপাটি, তা সে কলা-বৌ স্নান করানো থেকে শুরু করে ব্যারিটোনে চন্ডীপাঠ পর্যন্ত।
advertisement
আরও পড়ুন- বিহারে ফের 'লালু ম্যাজিক'! 'লালু বিন বিহার চালু' হতে পারে না, ইঙ্গিত লালু কন্যার
আরও পড়ুন- উদ্ধবের পরিণতি থেকে শিক্ষা, মহারাষ্ট্র কাণ্ড দেখেই বিজেপি-তে বিশ্বাসভঙ্গ নীতীশের
দিস্তা-দিস্তা নিউজ রিলে কত কত ইতিহাস লেখা হয়েছে এই বাড়ির পুজো নিয়ে। প্রণবের পিতার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তাঁর কন্যা কৃষ্ণা, প্রণবের বোন। তিনি একসময়ে সংবাদমাধ্যমেই বলেছিলেন, প্রণব পুজোর ম্যানেজার ছিলেন। মিরিটির মুখুজ্জেদের পুজোর প্রায় সবদিক সামলাতেন তিনি। পুজো সংক্রান্ত পুরো ব্যবস্থাপনায় তখন বা এখন, অনেকটাই ভার থাকে প্রণব-সূত অভিজিতের কাঁধে। এ বারেও পুজোতে থাকছেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি থাকতেন বাবার চণ্ডীপাঠের আসনের পাশটিতে বসে। সে আসন খালি করে চলে গিয়েছেন সবার আদরের পল্টু। তবে শুধু চণ্ডীপাঠ নয়, প্রণবের আরও ভূমিকা ছিল পুজোয়। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও দিল্লিতে থেকে এই গ্রামে ব্ল্যাক ক্যাট পরিবৃত হয়ে এসে প্রণব পটবস্ত্র পরে স্তব করতেন, তন্ত্রধারকের ভূমিকা পালন করতেন অনায়াসে। গ্রামের কতকালের চেনাজানা মানুষদের সঙ্গে দেখা করতেন, কুশল বিনিয়ম করতেন সকলের সঙ্গে। তিনি রাষ্ট্রপতি, কে বলবে!
এক বার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীক দায়িত্ব সামলানোর পরেও বীরভূমের এই পাড়া-গাঁয়ের প্রতি এই নিষ্কলুষ আনুগত্য কেমন করে ধরে রেখেছেন তিনি। আসলে সব লুকিয়ে আছে তাঁর অতীতে, শৈশবে, বাল্যের স্মৃতিতে। তিনি বলেছিলেন, "প্রতিটি গাছ, পুকুর, রাস্তা চিনতাম। মনে হত, সব বাড়িগুলোই তো আমার, সবাই আমার আত্মীয়।" সেই আত্মীয়তার বল্কলে প্রতিস্তরে লুকিয়ে ছিল রাষ্ট্রপতি ও তন্ত্রধারকের দ্বৈত সত্ত্বার চেনা ইতিহাস। আজ তিনি নেই। অপার শূন্যস্থানের মধ্যেও সেই মানুষটি যেন হাসি মুখে এখনও বিচরণ করেন মিরাটির পথে পথে, ধুলায় ধুলায়, ঘাসে ঘাসে। দুর্গাপুজোর সময় তা যেন একটু বেশি ধরা পড়ে আজও।
সুপ্রতীম দাস