এ বছর তাদের পুজো পা দিল ১৫ বছরে। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে এলাকাবাসীর ভালবাসায় বেড়ে ওঠা এই ক্লাব প্রতিবছরই নতুন নতুন ভাবনায় দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে এসেছে। সমাজসচেতন বার্তা থেকে শুরু করে নান্দনিক মণ্ডপসজ্জা, সবকিছুতেই তাদের ছোঁয়া থাকে মৌলিকতা ও শিল্পকলার মিশ্রণ। এবছর তাদের থিম, ‘সহজপাঠ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চিরন্তন শিক্ষাগ্রন্থের পাতাগুলোকেই তারা জীবন্ত করে তুলেছে মণ্ডপে। মণ্ডপে প্রবেশ করলেই দর্শনার্থী যেন হারিয়ে যান কবিগুরুর অক্ষর, শব্দ ও ছবির জগতে। একদিকে রয়েছে বর্তমান যুগের মোবাইল-নির্ভর শিশুদের চিত্র, অন্যদিকে বই হাতে বসে থাকা সহজপাঠের যুগের শিশু, এর মধ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে এক গভীর প্রজন্মগত তুলনা।
advertisement
পুরো মণ্ডপজুড়ে সহজপাঠের বিভিন্ন পৃষ্ঠা, শব্দচিত্র, কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো অক্ষর এবং শিশুকালের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মণ্ডপের প্রতিটি কোণে কোণে ‘সহজপাঠ’-এর মূর্ত প্রতীক, কখনও কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, কখনও পাখির বাসা, কখনও বা গ্রামের মাঠে খেলতে থাকা শিশুদের প্রতিচ্ছবি। শুধু থিম নয়, প্রতিমাতেও রয়েছে অনন্য শিল্পসৌন্দর্য। মা কালী প্রতিমা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। প্রতিমার রং, পোশাক, আলো ও সজ্জায় প্রতিফলিত হয়েছে একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে আধুনিকতার ছোঁয়া।
এবারের পুজোয় শুধুমাত্র শিল্প নয়, সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও ঘটেছে। ক্লাবের পক্ষ থেকে পুজোর দিনগুলোতে রক্তদান শিবির, বস্ত্রবিতরণ, এবং দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিভাবান শিশুদের দিয়ে সহজপাঠের কিছু অংশ আবৃত্তি করানো হবে, যা এই থিমকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পুজো শুরুর আগেই মণ্ডপে ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের গ্রামের দর্শনার্থীরা আগ্রহ নিয়ে আসছেন এই ব্যতিক্রমী ভাবনা দেখতে। সহজপাঠের স্মৃতি আর আধুনিকতার বাস্তবতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরায় সিংদা বন্ধু গোষ্ঠীর এই থিম ইতিমধ্যেই জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। ডিজিটাল যুগের প্রজন্মকে কবিগুরুর ‘সহজপাঠ’-এর অনুভূতি স্মরণ করিয়ে দিতে এ যেন এক নীরব আহ্বান, ফিরে তাকাও, ফিরে দেখো শিকড়কে।