বর্তমানে রাজবাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। আগাছায় ভরেছে গোটা রাজবাড়ি। রাতের অন্ধকার তো দূর দিনের বেলাতেও প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকলেই ছমছম করবে গা।
ইতিহাসের পাতা উল্টাটা দেখা যায়, সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে পুরীর গজপতিবংশীয় রাজা দেবরাজের অধীনে তুর্কাচৌর পরগণায় (বর্তমানে দাঁতন থানা) এক তেলেগু রাজা করদ জমিদার হিসেবে রাজত্ব করতেন। তাঁর রাজধানী ছিল খণ্ডরুইগড়।
advertisement
কিন্তু একসময় তিনি রাজাকে কর প্রদান বন্ধ করে দিলে দেবরাজ তাঁর সেনাপতি কৃষ্ণদাস মহাপাত্রকে পাঠান বিদ্রোহ দমন করতে। কৃষ্ণদাস বিদ্রোহী রাজাকে হত্যা করে রাজপুত্র দেবরাজের পায়ে তাঁর মুণ্ডু উপহার দেন। কৃতজ্ঞ হয়ে দেবরাজ কৃষ্ণদাসকেই সেই জমিদারী দান করেন এবং ‘সিংহ গজেন্দ্র’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
এই বংশের এক রাজা ছিলেন পঞ্চানন। জ্যেষ্ঠ পুত্র নীলকণ্ঠের মৃত্যুর পর জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত খড়ুই মহালটি তিনি নীলকণ্ঠের শিশুপুত্র কৈলাশচন্দ্রকে দেন। কিন্তু পঞ্চাননের মৃত্যুর পর রাজা কালীপ্রসন্ন কৈলাশচন্দ্রকে গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্র করেন।
তবে দাসীর মুখে ষড়যন্ত্রের খবর পেয়ে নীলকণ্ঠের পত্নী রানি পিয়ারীমণি রাতে শিশুপুত্রকে বুকে করে খড়ুই পালিয়ে আসেন। ১৮৬০ সালের সেই রাতে কালীপ্রসন্নের ঘাতকদের মুখোমুখি হয় খড়ুইর সাধারণ মানুষ। রাজপুত্রের প্রাণ রক্ষায় তারা বুক চিতিয়ে লড়ে ঘাতকদের পরাজিত করে।
এরপরেই নতুন রাজার হাতে সেজে ওঠে খড়ুই। নির্মিত হয় বিশাল রাজপ্রাসাদ, হাতিশাল, ঘোড়াশাল, কাছারিঘর, ফোয়ারাযুক্ত উদ্যান ও দুর্গা দালান। রাজবাড়ির একাংশে কুলদেবতা রাধাবল্লভ জিউ পূজিত হতেন। চারপাশে খোঁড়া হয় গভীর পরিখা, আর সেখান থেকেই নাম হয় খড়ুইগড়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সিংহ গজেন্দ্র বংশের বিশাল অট্টালিকা, রণ সায়র-এর বাঁধানো পাকার ঘাট, দুর্গা দালান—সব কিছুই। অনাদর আর পুরু শ্যাওলার নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে অতীত ইতিহাসের পাতাগুলি। বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় প্রাচীন রাজবাড়ীটি শুধুমাত্র ইট পাথরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ যদি এই রাজবাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে এটিও হয়ে উঠতে পারে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
মদন মাইতি