ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮০৯ সালের ৩১ বৈশাখ, বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার জমিদার গোপীমোহন ঠাকুর এই কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, তাঁর আট বছরের কন্যা ব্রহ্মময়ীর বিবাহদিনে পালকি-সহ গঙ্গায় স্নানের আয়োজন করা হয়। সেই ঘটনার পরেই কন্যার খোঁজ মেলেনি। পরবর্তীতে শ্যামনগরের যে স্থানে আজ মন্দিরটি অবস্থিত, সেখানেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। লোককথা অনুযায়ী, এরপর দেবী স্বপ্নে গোপীমোহন ঠাকুরকে দর্শন দিয়ে ওই স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন।
advertisement
আরও পড়ুন: ২০২৬-এ কতটা সচেতন থাকতে হবে মীন রাশির জাতক-জাতিকাদের! জানালেন জ্যোতিষী সুদীপ শাস্ত্রি
এই ঘটনার সময়েই ওই স্থানে কষ্টিপাথরের অর্ধপ্রোথিত এক দক্ষিণাকালীর মূর্তি উদ্ধার হয়। সেই মূর্তিকেই ব্রহ্মময়ী কালীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন গোপীমোহনের পুত্র গোপীনাথ ঠাকুর। পরবর্তীতে তাঁরই পুত্র প্রসন্নকুমার ঠাকুর মন্দির চত্বরের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছয়টি করে মোট ১২টি শিবদেউল নির্মাণ করেন। মন্দিরের স্থাপত্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সিঁড়ির দু’পাশে দুটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত শ্বেতপাথরের সিংহমূর্তি এবং তার উপরে আরও দুটি স্তম্ভের উপর বিষ্ণুমূর্তি দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জানা যায়, এই বিষ্ণুমূর্তিগুলি বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়ি থেকে গোপীনাথ জিউয়ের মূর্তি এনে ব্রহ্মময়ী মন্দিরের পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একের পর এক অবাক করা ঘটনার সাক্ষী এই স্থান।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ গঙ্গার বুকে বসে শ্যামাসংগীত গাইছিলেন। সেই গান শুনে দেবীর মুখ নাকি ঘুরে যায় এবং তিনি পশ্চিমমুখী বা গঙ্গাবক্ষমুখী হন। বামাক্ষ্যাপা নিজেও নাকি তারাপীঠ থেকে এসে এখানে সাধনা ও পুজো করেছিলেন। আরও একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবীর আদেশেই এখানে পৌষ মাসে জোড়া মুলো দিয়ে পুজো করার রীতি চালু হয়। সেই থেকেই মন্দিরের নাম ‘মূলাজোড় ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির’ বলে পরিচিত। গঙ্গার পাড়ে শিল্পাঞ্চল ঘেরা শ্যামনগরের এই প্রাচীন কালীমন্দির আজও ভক্তদের কাছে তাই জাগ্রত। প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত নানা মনস্কামনা পূরণের আশায় ভিড় করেন এই ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরে। এখন পৌষ মাসে এই মন্দিরে চলছে বিশেষ পুজোর সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণেই বসেছে মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসছেন মায়ের কাছে বিশেষ আরাধনায়।





