বছর বাহান্নের মা কাকলি শর্মা দেবনাথ প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে ছেলের পড়াশোনা ও সংসার চালানোর জন্যই আয়ার (নার্সিং) কাজ করতেন। নিউ ব্যারাকপুর থানার লেলিন সরণিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে একাই থাকতেন মা ছেলে। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে অন্যত্র, ছেলে প্রতাপ লেলিনগড় শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে ইতিহাসে মাস্টার্স কমপ্লিট করে এখন চাকরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন চাকরি পেলেই মায়ের এই ঝক্কির ভার কমাবেন। মা ছাড়া যে আর কেউই নেই তার। তাই কাজে যাওয়া আসার পথে মাকে দিয়ে আসা ও নিয়ে আসার দায়িত্বও পালন করতেন ছেলে। তার মায়ের সঙ্গেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে তা যেন এখনও মেনে নিতে পারছেন না ছেলে প্রতাপ।
advertisement
আরও পড়ুন: কোন ‘হাইটে’ কতটা ‘ওজন’ পারফেক্ট…? উচ্চতা অনুযায়ী আপনার Weight ঠিক আছে তো? দেখে নিন চার্ট
যশোর রোডের মাইকেল নগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মৃত্যু হয় দুজনের। সেই দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় এক ব্যক্তি-সহ প্রতাপ শর্মার মা কাকলি শর্মা দেবনাথের। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, মাইকেল নগরের দিক থেকে একটি বাস যশোর রোড ধরে বারাসাতের দিকে যাচ্ছিল। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের পিছনে এসে সজোরে ধাক্কা মারে একটি লরি। ওই মহিলা ও ব্যক্তি তখনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ঠ হন। পরবর্তীতে দুজনের দেহ উদ্ধার করে বারাসাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মার মৃত্যু হতেই যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে ছেলে প্রতাপের।
একা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখন পরবর্তীতে কি করবেন তা যেন ভেবে উঠতে পারছেন না। মায়ের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পড়ে থাকলেও, ছেলেকে দৌড়াতে হচ্ছে কখনও এয়ারপোর্ট থানা কখনও নিউ বারাকপুর আবার কখনও বারাসাত থানায়। মৃত্যুর পর এত ঝক্কি যেন আর এই শোকগ্রস্ত অবস্থায় সইতে পারছেন না বছর ছাব্বিশের ছেলেটি।
চোখের জল মুছতে মুছতেই প্রতাপ জানান, মানুষের জীবনের কী কোনও দাম নেই! ট্রাফিক সিগন্যালের এ ধরনের দূরাবস্থা কেন! রোজ হচ্ছে দুর্ঘটনা। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করেননি সেই জন্যই তাঁর জীবনে ঘটল এমন চরম পরিনতি। যে মা, এত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছিলেন, আক্ষেপ সেই মায়ের মুখটুকুও শেষ দেখা দেখতে পারবেন না ছেলে। কারণ দেহের এমন বিকৃত অবস্থা হয়েছে তা ভেবেও যেন শিউরে উঠছেন সকলে। এধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে হয়ত সাময়িক ব্যবস্থা নেয় পুলিশ, তবে আবারও স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রতাপের মতো জীবন বদলও হয়ে যায় অনেক সময়, পরবর্তীতে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না।
রুদ্র নারায়ণ রায়