উপস্থিত ছিলেন হরিটেজ দফতরের জেলার ম্যানেজার জয়ন্ত মন্ডল। সঙ্গে ছিলেন সুতি ২ নং ব্লকের বিডিও সমিরণকৃষ্ণ মন্ডল, মুর্শিদাবাদ জেলার ইতিহাস ও সাংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের প্রতিনিধি অরিন্দম রায়, শিবেন্দু গোস্বামী, সঞ্চিতা চক্রবর্তি, অঞ্জনা মদুক সহ অনেকেই। টুরিজম অফিসার জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, জেলা শাসকের নির্দেশে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। আগামী দিনে সমস্ত নিয়ম নির্দেশ মেনে করা হবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হবে।
advertisement
আরও পড়ুন: করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর বিরাট সিদ্ধান্ত রেলের! রেলে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের জন্য বড় খবর
প্রসঙ্গত, লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূত্র ধরে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই জমিদারির সূচনা হয়। নিমতিতা জমিদারির মূলপ্রবর্তক গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী যাঁদের নামে শতাব্দীতে প্রাচীন ও প্রখ্যাত নিমতিতা জি, ডি ইনস্টিটিউশন রয়েছে। এই বাড়িতেই জলসাঘরের শ্যুটিং করেছেন সত্যজিৎ রায়। শ্যুটিং হয়েছে দেবী, তিনকন্যা ইত্যাদি সিনেমার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই রাজবাড়ি পয়েন্ট থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক সহায়তা করে ভারত।
একদা নবাবের খাস তালুক মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের বহুমূল্য সম্পদ। যদিও তার বেশিরভাগই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও কিছু নিদর্শন অতীত গৌরবের স্মৃতি বুকে নিয়ে খন্ডহরের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই রকমই একটি নিদর্শন হল মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম নিমতিতা রাজবাড়ি। কীর্তিনাশা পদ্মার তীরে অবস্থিত নিমতিতা রাজবাড়ি বর্তমানে খন্ডহরের মতো পড়ে রয়েছে। বর্তমানে ভেঙে পড়েছে বাড়ির একাংশ। স্থানীয়রা একাধিকবার এই রাজবাড়িটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তোলেন। সেই দাবি মেনেই ১৭ই মার্চ ২০২২সালে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লকে নিমতিতা রাজ বাড়ি পরিদর্শন করেন পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধি দল। পরে ১লা জুন ২০২২ সালে এই বাড়ি হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপরে বসানো হল হেরিটেজ বোর্ড।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা হতে পারে, ৪ মাস আগেই সাবধান করেন রেলকর্তা! করমণ্ডল-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
মুর্শিদাবাদের প্রাচীন রাজ বাড়ির মধ্যে অন্যতম নিমতিতা রাজবাড়ির বয়স ৩৫০ বছর। প্রাচীনত্বের সঙ্গে রাজবাড়ি আজ জৌলুস হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ৩৫০ বছর আগে গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরীর হাতে তৈরি হয়েছিল এই রাজবাড়ি। এখন যদিও পেশাগত কারণে রাজ উত্তর সূরীরা থাকেন অন্যত্র।
একসময় রাজপ্রাসাদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো রাজকীয় বৈভব। কিন্তু, আজ সে বিবর্ণ। নিষ্ঠুর কাল কেড়ে নিয়েছে তার যৌবন। জরাজীর্ণ কঙ্কালসার নিমতিতার রাজবাড়ি যেন কোনও ক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে জানা-অজানা ইতিহাসের নানা সাক্ষী নিয়ে। একসময় বাংলা নাটকের আঁতুড়ঘর ছিল এই রাজবাড়ি। সংস্কৃতির সঙ্গে এই রাজবাড়ির যোগও দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতা আন্দোলনেও প্রভাব ছিল এই রাজবাড়ির। এই বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। ক্ষিরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, শিশির কুমার ভাদুড়ীর নাটক মঞ্চস্থ হত এখানে। বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁর দেবী ও জলসাঘর সিনেমার শুটিং করেছিলেন এখানে।
অতীত গৌরবের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে থাকা এই রাজবাড়িকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে হেরিটেজ কমিশন। আগামী দিনে জেলার অতীত ইতিহাস জানুক বর্তমান প্রজন্ম। পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক মুর্শিদাবাদ। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকায় আর্থিক সামাজিক আরও উন্নতি হবে বলেই ধারণা এলাকার বাসিন্দাদের।
কৌশিক অধিকারী