নায়েকালী অর্থাৎ নৌকার উপর মা কালীর অধিষ্ঠান। এই মন্দিরে ছোট নৌকার উপর পাথরের কালীমূর্তি বিরাজমান। নায়েকালী মন্দিরে সিংহবাহিনী দুর্গাপ্রতিমাও স্থাপিত আছে। তাই এখানে মা দুর্গা ও মা কালী একসঙ্গে পূজিতা হন। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময় এই মন্দিরে বিশেষ আড়ম্বরে পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তবে নায়েকালীর বার্ষিক বৃহৎ পুজো দোলপূর্ণিমার সময় হয়, তখন দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত মন্দিরে এসে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
advertisement
কথিত আছে দেবীর মন্দিরের চারপাশ ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। আর, সেই জঙ্গল পেরোতেই পুকুরের মত বিরাট খাল। শুনতে অদ্ভুত হলেও, যার চারপাশটা থাকত নোনা জল। আর, মন্দিরের কাছাকাছি অঞ্চলটা থাকত মিষ্টি জলে পরিপূর্ণ। সেই সময়ও দূর-দূরান্ত থেকে বাসিন্দারা নৌকো করে জল বেয়ে পৌঁছতেন মন্দিরে। এখনো মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মৎস্য শিকার এর আগে এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যান। আজও ভক্তরা বংশ পরম্পরায় দেবীকে ভোগ দেওয়ার রীতি বহাল রেখেছেন। তাঁরা দেবীর জন্য ভোগ তৈরি করে নিয়ে আসেন।
সারা বছরই স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা নায়েকালী মন্দির দর্শনে আসেন। তাই এই জায়গাকে কালীপুজোর আগে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য থ্রি-ডি থিয়েটার, লেজার লাইট শো, ড্যান্সিং ওয়াটার ফাউন্টেন সহ অন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন ঝিলে থাকছে ফোয়ারা।
দিঘা-শৌলা মেরিন ড্রাইভের পাশেই নায়েকালী মন্দির, যা এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। বহু বছর ধরে এখানে তালপাতার ছাউনিতে মায়ের পুজো হত, যেখানে স্থানীয় মানুষজন নিয়মিত পুজো-অর্চনা করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের উদ্যোগে এবং প্রশাসনের সহায়তায় এই মন্দিরটি নতুন রূপ পেয়েছে। বর্তমানে কংক্রিটের সুদৃশ্য স্থাপত্যে নির্মিত এই মন্দিরকে সাজানো হয়েছে আধুনিক সাজে, যার জন্য ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। তাই এবার কালীপুজোর সময় দিঘায় বেড়াতে এসে যদি কেউ এই মন্দির দর্শন না করেন, তাহলে সত্যিই এক বড় অভিজ্ঞতা মিস করবেন।
Madan Maity