ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, প্রায় ১৫১০ সালে শ্রীচৈতন্যদেব নীলাচল (পুরী) গমনের পথে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই অঞ্চল দিয়ে গিয়েছিলেন। তখন কেলেঘাই নদীর তীর ঘেঁষে থাকা কঙ্কেশ্বর মহাদেব মন্দিরের কাছে তিনি বিশ্রামের জন্য আশ্রয় নেন। কথিত আছে, সেই সময় তিনি কঙ্কেশ্বর মহাদেবের পুজো-অর্চনা করেন এবং মন্দিরের পাশেই একটি নিমগাছ রোপণ করেন। সেই নিমগাছই আজও কেলেঘাই নদীর পাড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
advertisement
আরও পড়ুন : প্রতিমা, মণ্ডপ ছেড়ে নজর ধূপকাঠিতে! যেন ‘একাই একশো’, কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা এলাকা! একটানা জ্বলবে পাঁচদিন
স্থানীয় প্রবীণদের বক্তব্য, এই নিমগাছের বয়স প্রায় পাঁচ শতাব্দীরও বেশি। কত ঝড়, বৃষ্টি বন্যা, সব সহ্য করেও গাছটি এখনও জীবন্ত। বহুবার কেলেঘাই নদীর বন্যায় কঙ্কেশ্বর মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু নিমগাছটি টিকে রয়েছে সময়ের সাক্ষী হয়ে। বহন করে চলেছে প্রায় ৫০০ বছর আগের ইতিহাস। এই নিমগাছকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের ধর্মীয় ভক্তি ও ঐতিহ্যের বন্ধন গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত এখানে জড় হন। কেউ মন্দিরে পুজো দেন, কেউ গাছের নিচে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, গাছের নীচে প্রার্থনা করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে কয়েক বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে পর্যটন মানচিত্রে আনার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই কেলেঘাই নদীর ধারে বসান হয়েছে নামফলক ও বেড়া। এলাকাবাসীর আশা, সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, তবে এই নিমগাছ ও কঙ্কেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি ঐতিহ্য-ভিত্তিক ধর্মীয় পর্যটনকেন্দ্র।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই গাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি আমাদের গর্ব। চৈতন্যদেবের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের গ্রামের অস্তিত্ব।’’ অন্যদিকে মন্দিরের পুরোহিত প্রদীপ মিশ্র বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, গাছটি চৈতন্যদেব লাগিয়েছিলেন। কত ঝড় বৃষ্টি বন্যা গেছে কিন্তু গাছটি অক্ষুন্ন রয়েছে।” সময়ের সাক্ষী এই নিমগাছ আজও যেন নিঃশব্দে বলে চলে ইতিহাসের কথা। নদীর হাওয়ায় তার পাতা দুলে ওঠে, আর গ্রামের মানুষ মনে করেন চৈতন্যদেবের সেই পদচিহ্ন এখনও মিশে আছে কেলেঘাই নদীর বাতাসে।






