২০২০ সালের ১৩ মার্চ খুন হয়েছিলেন হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসিন্দা সুজয় সাঁতরা (২৩)। তদন্তে উঠে আসে সুজয়ের বন্ধু তথা ওড়িশার বাসিন্দা মনোরঞ্জন দাসের নাম। ওড়িশার বাসিন্দা হলেও হলদিয়ায় একটি খাবারের দোকান খুলেছিলেন মনোরঞ্জন। ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর বিচার প্রক্রিয়ার পর হলদিয়া মহকুমা আদালত মনোরঞ্জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করল।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ধান চাষে নতুন আশার আলো! বাদশাভোগ ফলিয়ে লাভবান এগরার চাষিরা, সুগন্ধে ম ম করছে গ্রামবাংলা
সুজয় এবং মনোরঞ্জন দু’জনেই বন্ধু ছিলেন। মনোরঞ্জন ওড়িশার জাজপুর জেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তালপুকুর এলাকায় একটি ইডলি, ধোসা ও চপের দোকান খুলে ব্যবসা করছিল। থাকত আত্মীয়ের বাড়িতে ভাড়ায়। গুদামের জন্য একটি পৃথক ঘরও মনোরঞ্জন ভাড়া করেছিল। মনোরঞ্জনের দোকানে ভালই যাতায়াত ছিল সময় সুজয়ের। ঘটনার দিনও তিনি বাড়ি থেকে বলে বেরোন যে, মনোরঞ্জনের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু রাত হলেও আর ঘরে ফেরেননি। সুজয়ের মা খোঁজখবর করেন। সুজয়ের ফোন প্রথমে বেজে যায়। পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মনোরঞ্জনকেও এরপর দোকানে এবং বাড়িতে দেখা যায়নি।
ছেলের কোন খোঁজ না পেয়ে পরের দিন অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৪ মার্চ দুর্গাচক থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সুজয়ের মামা সত্যেন্দ্রনাথ আচার। দুর্গাচক থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জেরা করে মনোরঞ্জনের দোকানের দুই কর্মীকে। তারা সুজয়কে খুনের বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ মনোরঞ্জনের গুদাম থেকে সুজয়ের দেহ উদ্ধার করে। সুজয়ের দেহ কাঠের সঙ্গে বস্তায় ভরা ছিল। সারা দেহ ১৯টি ক্ষত ছিল। পুলিশের জেরায়, মনোরঞ্জনের দোকানের কর্মীরা জানান যে, কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে সুজয়কে। তারা ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাদের হুমকি দিয়েছিল মনোরঞ্জন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পুরোনো কোনও বিষয়ে বিবাদ থেকে মনোরঞ্জন সুজয়কে ডেকে এনে খুন করেছিল। জানা যায়, সুজয় মনোরঞ্জনের কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। আর সেই টাকা মনোরঞ্জন বারবার চাইছিল। ঘটনার দিন টাকা চাওয়া নিয়েই দুই বন্ধুর মধ্যে বিবাদ হয়। রাগের বশে মনোরঞ্জন সুজয়ের মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সুজয়।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর হলদিয়া মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সত্যজিৎ মাইতি সাজা ঘোষনা করেন। মামলার স্পেশাল প্রসিকিউটর সৌমেন কুমার দত্ত জানান, ‘মনোরঞ্জন দাসের ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। অনাদায়ে এক বছর কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বন্ধুর কাছে টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়াটাই কাল হয়েছিল সুজয়ের। যা তাকে প্রাণের বিনিময়ে মেটাতে হয়েছে।






