বঙ্গের ঋতুরঙ্গে সবচেয়ে প্রিয় ঋতু শীত। শীতকাল মানেই চলে আসে নলেন গুড়, পিঠে-পুলি-পায়েস-সহ বিভিন্ন খাবার দাবার। সেই খাদ্য তালিকায় বড়ির স্থান উপরের দিকেই। আর তা যদি হয় গয়না বড়ি, তা হলে তো আর কথাই নেই। এই বড়ির সঙ্গে মেদিনীপুরের মানুষের ভালবাসা ওতপ্রত ভাবে জড়িত। নবান্ন, বড়দিন বা পৌষমেলার মতোই বাংলায় শীত ছিল এক উৎসবের ঋতু। আর সেই উৎসবের পুরোধা হল গয়না বড়ি। গয়না বড়ি তৈরির উপকরণ: গয়না বড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজন বিউলির ডাল, পোস্ত, তিল, এলাচ স্বাদ মতো, নুন স্বাদ মতো, সামান্য কালো জিরে।
advertisement
গয়না বড়ি তৈরির পদ্ধতি: আগের দিন বিকেলবেলা বিউলির ডাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভেজানো ডাল জল থেকে ভালো করে পরিষ্কার করে ছেঁকে নেওয়া হয়। তারপর সুন্দর করে বেটে নিতে হয়। বেটে নেওয়া ডাল এলাচ কালো জিরে, স্বাদমতো নুন মিশিয়ে থালায় বা অন্য পাত্রে ফেটিয়ে নেওয়া হয়। অন্য দিকে, একটি বড় থালার পাত্রে পোস্ত বা তিল বিছিয়ে ফেটিয়ে নেওয়া ডাল কাপড়ের টুকরো এবং চোঙের সাহায্যে গয়না বড়ি দেওয়া হয়। বেটে নেওয়া ডালকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফাটতে হয়। তাতে বড়ি হালকা এবং মুচমুচে হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, গয়না বড়ি শুধুমাত্র দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। বংশ পরম্পরায় আজও তমলুক, মহিষাদল-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়ির মা-বোনেরা শীতের সকালে গয়না বড়ি তৈরি করেন। সাধারনত অগ্রহায়ন মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাড়িতে বাড়িতে লেগে থাকে এই উৎসব। বিউলির ডাল, পোস্ত, সাদা তিল এবং অন্যান্য মশলার সংমিশ্রনের সঙ্গে মেয়েদের সুদক্ষ হাতের কারুকার্যের নিদর্শন হল এই গয়না বড়ি। বছর পর বছর পেরিয়েও বর্তমান প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে সেই কারুকার্যের ছাপ।
সৈকত শী