পূর্ব বর্ধমানের মেমারির আমাদপুরে ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা নামে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। গ্রামে ঢুকলে প্রথমেই প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার বড় মায়ের দর্শন পাওয়া যায়। আরও কিছুটা এগোলেই রয়েছেন প্রায় সম উচ্চতার মেজমা। তার আশেপাশেই রয়েছেন সেজমা ও ছোট মায়ের মন্দির।
গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পূজিত হন দেবী কালী। ১০০ টিরও বেশি কালীপুজো হয়ে গ্রাম জুড়ে। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, ক্ষ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা ইত্যাদি ভিন্ন নামে মা কালী এখানে পূজিত হন। এই জন্য এই গ্রাম মানুষের কাছে ‘কালীগ্রাম’ নামেই পরিচিত।
advertisement
তাই দুর্গাপুজো নয়, কালীপুজোকেই কেন্দ্র করে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। আর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ হল ভাসানের শোভাযাত্রা ঘিরে। পুজো ঘিরে শোনা যায় নানা কাহিনি। বাংলার এই গ্রামে দুর্গা নয়, কালীপুজোই আসল। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ কালীপুজোর ভাসান দেখতে হাজির হন মেমারির আমাদপুরে।
মেমারির আমাদপুর এক প্রাচীন জনপথ। কথিত আছে, পূর্বে এখান দিয়েই প্রবাহিত ছিল বেহুলা নদী। বর্তমানে তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। এক সময়ে বাণিজ্য তরীও নাকি যাতায়াত করত এখান থেকে। সেই সময়ে বণিকরা দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতেন। বেহুলা নদীর ধারে ছিল মহাশ্মশান। সেখানে এক সাধু থাকতেন। সেই সাধু শ্মশানে কালীসাধনা করতেন। বণিকরা দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে এই শ্মশানে কালী মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, এরপর থেকেই তাঁরা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেন। তখন থেকেই এই দেবীর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে।
বিসর্জনের সময়ে বড়, মেজ, সেজ আর ছোটমাকে চতুর্দোলায় করে শোভাযাত্রা বের হয়। সারা রাত গোটা গ্রাম ঘোরানোর পরে ভোর বেলায় হয় বিসর্জন। এই দেবীরা ছাড়াও গ্রামে আরও যত দেবী রয়েছেন, সকলকেই একসঙ্গে চতুর্দোলা করে একটির পর আর একটি – এইভাবে লাইন দিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। আশেপাশের জেলা থেকে মানুষজন এসে ভিড় জমান বিসর্জন দেখতে।