ঝাড়গ্রাম পাঁচমাথা মোড়ের কানাগলি মার্কেটে অন্বেষা বিউটি স্যালন আজ যথেষ্ট পরিচিত নাম। এটি ইউনিসেক্স স্যালন, তাই পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আসতে পারেন এখানে। তবে সোনাইয়ের জার্নিটা একেবারে সহজ ছিল না। রূপান্তরকামী হিসেবে সোনাইকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক যন্ত্রণা। সোনাইয়ের মা অন্বেষা নন্দী বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল এই বিউটি স্যালন খুলেছেন। পরিবারের অমতেই তিনি কলকাতা থেকে বিউটিশিয়ান কোর্স করেন। প্রথমে মানিকপাড়া এলাকায় ছোট্ট বিউটি পার্লার খুলেছিলেন, এরপর ধাপে ধাপে নামডাক হয়। বর্তমানে কানাগলি মার্কেটে বড় করে অন্বেষা বিউটি স্যালন খোলেন অন্বেষাদেবী। মেয়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সমাজ ও পরিবারের অনেক কটুকথা সহ্য করেছেন, তবুও দমে যাননি। আজ মেয়েকেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
advertisement
ছোট থেকে পুরুষ হিসেবেই বড় হয়েছে সোনাই। কিন্তু মনেপ্রাণে নিজেকে নারী ভাবতেন তিনি। চাইতেন নিয়মিত চিকিৎসা ও অস্ত্রপচার করে পুরুষ থেকে নারী হবেন। রূপান্তরকামী হিসেবে তাঁর লড়াই ছিল সমাজের সঙ্গে। আজ নিজের লড়াইয়ে জিতেছেন সোনাই। তাঁর কথায়, রূপান্তরকামী হিসেবে তিনি গর্বিত এই শারীরিক ও মানসিক মেলবন্ধনের জন্য। সেই সঙ্গে গর্বিত তাঁর বাবা ও মায়ের জন্য। প্রায় তেরো চোদ্দো বছর বিউটিশিয়ানের কাজ করছেন সোনাই। প্রথমদিকে পুরুষ হয়েই কাজ করতেন। এরপর অস্ত্রপচারের পর পুরোদস্তুর নারীতে রূপান্তরিত হন তিনি। সোনাইয়ের কথায়, সেই সময় বহু কাস্টমার তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সকলেই ফিরে আসেন অন্বেষা বিউটি স্যালনে।
আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ভারত চন্দ্র বিজয় করেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির ধ্বজা তুলে ধরেও কুসংস্কার থেকে। কিন্তু তাও নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি অনেকে। রূপান্তরকামীরাও যে মানুষ, তাঁদের নিজস্ব চাওয়া পাওয়া ও পছন্দ আছে সেটাই অস্বীকার করেন কেউ কেউ। তাই রূপান্তরকামীদের আজও অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু অন্বেষা দেবী ও সোনাইয়ের মতো মানুষরা সব গঞ্জনার জবাব দিয়েছেন। রূপান্তরকামী হয়েও তাঁরা আজ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।