অর্থাভাব। মায়ের মৃতদেহ শববাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ নেই। তাই মায়ের মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছেন দিনমজুর ছেলে। জলপাইগুড়িতে থেকে মেদিনীপুর বিভিন্ন জায়গা থেকে এমনই নানা মর্মান্তিক ছবি সামনে এসেছে। ঘটনার নেপথ্যে উঠে এসেছে বেসরকারি শববাহী গাড়ির জুলুমবাজি। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনমজুর ছেলের কাছে তিন হাজার টাকা চেয়েছিলেন শববাহী গাড়ির চালক। তা দিতে পারেননি ছেলে। বাধ্য হয়েই কাঁধে মায়ের দেহ তুলে হাঁটা দিয়েছিলেন দিনমজুর যুবক। মেদিনীপুরেও সুযোগ বুঝে একাংশ শববাহী গাড়ির চালক চড়া দর হাঁকান বলে নালিশ।
advertisement
আরও পড়ুনঃ সাতসকালে চাষ জমিতে ধারালো হাসুয়া নিয়ে গৃহবধূর উপর চড়াও! কান কেটে…! ভয়ঙ্কর ঘটনা মালদহে
ঝাড়গ্রামেও শববাহী গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতারিত হতে হয় মৃতের আত্মীয়দের। তাই এবার সমস্ত কিছু বিতর্ক দূরে রাখতে উদ্যোগী হল কান্দি পৌরসভা। কান্দি বিধানসভার বিধায়ক অপূর্ব সরকারের উন্নয়ন তহবিল থেকে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি শববাহী গাড়ি ও পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্নতার উন্নতি সাধনে ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চারটি মিনি ট্রাকটার প্রদান করা হল কান্দি পৌরসভাকে।
কান্দি পৌরসভার চেয়ারম্যান জয়দেব ঘটক জানিয়েছেন, কান্দি পৌরসভা এক প্রাচীন পৌরসভা। কিন্তু এই পৌরসভার নাগরিকদের মৃত্যু হলে অনেক সমস্যা তৈরি হতো। কখনও অ্যাম্বুলেন্স বা ছোট গাড়ি ব্যবহার করা হতো। তবে এবার এক ফোন করলেই হাসপাতাল থেকে দেহ পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়িতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মুর্শিদাবাদের কান্দি পৌরসভা ভবনের সামনে এই গাড়িগুলি সাধারণের পরিষেবার উদ্দেশ্যে পথ চলা শুরু করল। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কান্দি বিধায়ক অপূর্ব সরকার, কান্দি পৌরসভার পৌরপিতা জয়দেব ঘটক-সহ একাধিক পৌরসদস্য ও পৌর কর্মচারী বৃন্দ।
পুজোর আগেই পৌরবাসীর জন্য বিনামূল্যে শববাহী গাড়ির পরিষেবা চালু করার ফলে বেশ খুশি প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। কান্দি বিধায়ক অপূর্ব সরকার জানিয়েছেন, ‘মানুষ হাসপাতালে মারা গেলে সেই মৃতদেহ তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে মৃতব্যক্তির আত্মীয় পরিজনদের বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ঠিকমত গাড়ি পাওয়া যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির জন্য অস্বাভাবিক ভাড়া চাওয়া হয়। আবার মধ্যপ্রদেশের মত বেশ কিছু রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে, সাইকেলে বা কাঁধে করে মৃতদেহ নিয়ে গিয়েছে তার আত্মীয়েরা। অত্যন্ত যন্ত্রণার ছবি এদেশ দেখেছে। সব মিলিয়ে এই প্রেক্ষিতে আমরা কান্দি পৌরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আর একটি নতুন শববহনকারী স্বর্গরথ ক্রয় করেছি। কান্দি পৌরসভার সকল মানুষের আমরা জানাচ্ছি যে, কেউ কান্দি হাসপাতালে মারা গেলে তার মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য 9732100100 এই নম্বরে ফোন করে জানাতে হবে। এক ঘন্টা সময় দিতে হবে। যা সম্পূর্ন বিনামূল্যে কান্দি পৌরসভার স্বর্গরথ গাড়ি সেই মৃতদেহ তার বাড়িতে পৌঁছে দেবে’। (শুধুমাত্র কান্দি পৌর এলাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)
পৌরবাসীর অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই পরিষেবা চালু করল কান্দি পৌরসভা। পৌরসভার এই উদ্যাগে খুশি পৌর এলাকার বাসিন্দারা।