স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা বোলতলা কালী অত্যন্ত জাগ্রত এবং ভক্তদের কখনও নিরাশ করেন না তিনি। প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসা এই পুজো এখন বারোয়ারি রূপে পরিণত হয়েছে। গঠিত হয়েছে একটি পুজো ট্রাস্টও। ট্রাস্ট ও গ্রামবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে আজও একই নিষ্ঠায় অনুষ্ঠিত হয় এই আরাধনা।
আরও পড়ুনঃ বাতাসা-নকুলদানা-কদমার সুবাসে ম ম করছে কালনার অলিগলি, কালীপুজোর আগে এ কোন উৎসব লেগেছে জানেন!
advertisement
দীপান্বিতা অমাবস্যার দুপুরে শুরু হয় সিঁদুরখেলার বিশেষ পর্ব। এদিন এলাকার বিবাহিতা মহিলারা একে অপরকে সিঁদুরে রাঙিয়ে শুভ কামনা জানান। পুজো শুরু হয় গভীর রাতে, প্রায় ১২টার পর, তন্ত্রমতে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। এই দিনই প্রতিমায় পড়ে নতুন রঙের প্রলেপ, আর মা সেজে ওঠেন এক নব রূপে। প্রায় ১১ ফুট উচ্চতার প্রতিমাকে সোনা ও রুপোর গয়নায় সাজানো হয়। তবে এই পুজোর আসল আকর্ষণ দেবীর বিসর্জনের রীতি। বিসর্জনের মুহূর্তে গোটা গ্রাম যেন অন্য জগতের রূপ নেয়।
পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘পুজোর তো একাধিক নিয়ম রীতি রয়েছে। সকলেই এই পুজোর জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তবে আমাদের এই পুজোর সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় বিসর্জন, যেটা দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন’। মন্দির থেকে প্রতিমা বের করার সঙ্গে সঙ্গেই নিভিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের সমস্ত আলো। অন্ধকারে একমাত্র আলো আসে গ্রামবাসীর হাতের পাটকাঠির মশাল থেকে। কোনও গাড়ি বা বাহন নয়, দেবীকে কাঁধে তুলে নেন ভক্তরা, আর শুরু হয় এক অনন্য দৌড়।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
দেবীর সঙ্গে দৌড়ায় সারি সারি মশালের আলো। প্রতিধ্বনিত হয় ‘জয় মা কালী’ ধ্বনি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা বোলতলা কালীকে হেঁটে নিয়ে যাওয়া যায় না, তাঁকে কাঁধে তুলে দৌড়ে নিয়ে যাওয়াই এই পুজোর প্রাচীন নিয়ম। প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গ্রাম আমডাঙ্গায়। যেখানে অবস্থান করছেন বুড়ো শিব। সেখানেই দেবী ও শিবের ‘দর্শন’ পর্ব সম্পন্ন হয়। পরে একইভাবে দৌড়ে দেবীকে ফিরিয়ে আনা হয় মুস্থূলী গ্রামে এবং মন্দির সংলগ্ন পুকুরে সম্পন্ন হয় প্রতিমা বিসর্জনের আচার। শতাব্দী পেরিয়েও এই রীতিনীতি, বিশ্বাস আর ভক্তির আবেগে আজও সমানভাবে জেগে আছে মুস্থূলীর মা বোলতলা কালীপুজো। যা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক।