৪০ বছর আগে বাবা মঙ্গল দত্ত ও মা হীরা দত্তের পুত্র সন্তান জন্ম হয়। ডাক্তারের অনুরোধেই সাধ করে ছেলের নাম রেখেছিলেন শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের হাতের সামান্য টোকায় দত্ত পদবী পাল্টে হলো ‘কুত্তা’। রেশন কার্ডে শ্রীকান্তির নাম শ্রীকান্তি কুমার ‘কুত্তা’ (KUTTA)। তাই নাম অনুসারে কুত্তা অর্থাৎ কুকুর সেজে অভিনব প্রতিবাদ বাঁকুড়ার যুবকের। বাঁকুড়ার কেশিয়াকোল এলাকার বছর চল্লিশ এর যুবক শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। শিক্ষিত বেকার যুবক কোন সরকারি কাজের সন্ধান না পেয়ে বাড়ির নিচেই বাবার তৈরী দশকর্মা দোকানে বসেন। বাবা, মা ও শ্রীকান্তি মিলে এই দোকান থেকেই যা আয় করেন, তাতেই চলে যায় কোনওরকমে পাঁচজনের সংসারে। তবে শ্রীকান্তির সমস্যা সংসার চালাতে নয়, সমস্যা অন্য জায়গায়। শ্রীকান্তির সমস্যা পদবী বিভ্রাট। আধার কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ডে শ্রীকান্তি কুমার দত্ত ( SRIKANTI KUMAR DUTTA) থাকলেও খাদ্য নিয়ামক দফতরের তৈরি করা সম্প্রতিক কালের ই-রেশন কার্ডে তাঁর নাম এসেছে শ্রীকান্তি কুমার কুত্তা।
advertisement
গত পাঁচ বছরে বহুবার নাম সংশোধনের চেষ্টা করেছেন শ্রীকান্তি। কিন্তু কোনওভাবেই বাবা মায়ের দেওয়া সঠিক নাম আসছে না রেশন কার্ডে। এ সমস্যা কথা জানিয়ে বারবার ধরে সরকারি বিভিন্ন দফতরে তদবির করেছেন প্রায় ৫ বছর ধরে এমনটাই দাবি শ্রীকান্তির। প্রথমে জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতরে রেশন কার্ডের জন্য আবেদনে ২০১৫ সালে শ্রীকান্তি মন্ডল নামে কার্ড আসে। এরপর ২০২১ সালে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি-সহ আবেদন করেন শ্রীকান্তি। সেখানেও নাম আসে শ্রীকান্ত কুমার দত্ত। এর পর আবার ২০২২ এর দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের আবেদন করেন নাম পরির্বতনের। এরপর আবার সেই নাম বিভ্রাট। এ বার আবার নাম ঠিক করা হলেও পদবী দত্ত জায়গায় লেখা হয় কুত্তা। এরপরও রেশন কার্ডে পদবী ঠিক করতে বারবার ধরে সরকারি দফতরে আবেদন নিবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর জন্য আলাদা স্পিডোমিটার! মারাত্মক অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা
আরও পড়ুন: 'ডিসেম্বরে সবাই ভালোই থাকবেন', চন্দ্রিমার মন্তব্যে তুঙ্গে জল্পনা
সম্পতি কালে বাঁকুড়ার দু’নাম্বার ব্লকের বিকনা অঞ্চলেই ডোকরা শিল্প গ্রামে বসেছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। সেখানেই অভিনব প্রতিবাদের ভাবনা আসে শ্রীকান্তির মাথায়। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। যখন সরকার তার পদবী কুত্তা অর্থাৎ কুকুর রেখেছে, সেক্ষেত্রে কুকুর হয়েই তিনি প্রতিবাদ জানাবেন। সেই মতো কুকুরের ‘ঘেউ ঘেউ’ আওয়াজই তার প্রতীকী প্রতিবাদ জানান তিনি। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে যেই দেখাশোনা করতে আসেন, দু’নম্বর ব্লকের সহকারি ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বিমান কর তাঁকে দেখেই ঘেউ-ঘেউ করতে শুরু করেন শ্রীকান্তি।
প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যান জয়েন্ট বিডিও, পরে অবশ্য তার কাগজপত্র দেখে ঘেউঘেউ করার কারণ বুঝতে পারেন। অবিলম্বে এই ভুলের ব্যবস্থা করবেন এমন আশ্বাসও দেন। কিন্তু নাছেড়বান্দা শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। যতক্ষণ জয়েন ভিডিও বিভিন্ন দফতরের সরকারি উপভোক্তাদের জন্য তৈরি করা স্টল ঘুরে দেখছেন ততক্ষণ তার পিছনে পিছনে কুকুরের মতই ঘেউঘেউ করতে থাকেন শ্রীকান্তি। এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও সরকারি আধিকারি মুখ খুলতে চাননি শ্রীকান্তির দাবি এটা ছিল একটা প্রতীকী প্রতিবাদ।
প্রবীর কুণ্ডু