দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত তিনি। পাশাপাশি দশ বছর ধরে একজন অঙ্কনেরও শিক্ষক। কাঠের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের নিখুঁত সুন্দর সুন্দর মূর্তি তৈরি করেন এই শিল্পী। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী, ক্ষুদিরাম, ডান্ডি অভিযান, সব বিভিন্ন মনীষীদের মূর্তি যেমন তৈরি করেছেন, ঠিক তেমনি বিভিন্ন দেব দেবী মূর্তিও তৈরি করেছেন। আর সেই সমস্ত মূর্তি সরকারি হস্তশিল্প মেলায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন প্রশান্ত। ১০০ টাকা থেকে শুরু ১৩ হাজার টাকার পর্যন্ত কাঠের মূর্তি রয়েছে তার কাছে। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় গিয়ে সেগুলি বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তার একটা অংশ প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব পড়ুয়াদের জন্য খরচ করেন।
advertisement
আরও পড়ুন : নাম ভাঁড়িয়ে জাল লটারির বিশাল কারবার! গোপন ছাপাখানা দেখে অবাক পুলিশ, শেষে জালিয়াতির পর্দাফাঁস
বিনামূল্যে রং, পেন্সিল ,খাতা, পোশাক সহ বিভিন্ন জিনিস কিনে দেন। এমনকি গ্রামে গিয়ে দু:স্থ পড়ুয়াদের অঙ্কনের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশান্তর হস্তশিল্পের সুনাম রয়েছে বিদেশের মাটিতেও। অস্ট্রেলিয়া ,সৌদি আরব, ইরান সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে তার শিল্প। বিপুল জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। প্রশান্ত বাবুর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পুরস্কার। জেলা স্তরে পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার। রাজ্যস্তরে পুরস্কার পেয়েছেন তিন বার। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বারুইপুরে এক্সপেরিমেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাও দিয়েছিলেন। কাঠ ছাড়াও তিনি থার্মোকল, ফাইবার, রেসিন, প্লাস্টিকের বোতল কেটে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা শেখান।
প্রশান্ত অধিকারীর বাবা অরুণ অধিকারীর ছিল কাঠের ব্যবসা। তার পরিবারে অভাবের মধ্যেও প্রশান্ত বাবুকে আঁকা শিখিয়েছিলেন। বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স করার পর, ২০০৯ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন। হুগলির পান্ডুয়া ও বলাগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে গরিব ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্টের কাজ সেখান তিনি। তার অঙ্কনের পড়ুয়ার সংখ্যা ২৬২ জন ।এদের মধ্যে ১৪০ জনকে বিনামূল্যে তিনি অঙ্কন ও হস্তশিল্প শেখান প্রশান্ত। আগামী দিনে তার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়া। তার জন্য চলছে প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন : পারিবারিক ব্যবসা থেকেই নতুন বিজনেস আইডিয়া, ডাক শুনেই ছুটে আসে ক্রেতা! দৈনিক আয় হাজার হাজার টাকা
শিক্ষকের এই কাজে খুশি পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। উদিতা প্রমানিক, সুব্রত রায়ের সন্তানরাও এই শিক্ষকের কাছে আঁকা শেখেন। কিন্তু কারোর কাছ থেকে কোনও পারিশ্রমিক নেন না। দরিদ্র বাচ্চাদের খাতা, রং পেন্সিল কিনে দেন। প্রশান্ত জানান, ছোটবেলায় আমি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছি। সেই অনুভূতি আমি বুঝি। তাই কোন গরিব মানুষ যাতে অর্থের জন্য কোনও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই কারণেই আমি বিনা পারিশ্রমিকে গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের আঁকার বিভিন্ন সামগ্রিক কিনে দি। আমার বাবা অনেক আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও আঁকা ও পড়াশোনা শিখিয়েছিল। আমার তৈরি হস্তশিল্প দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে। আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করেন। আমার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া। তার জন্য আমার লড়াই জারি রয়েছে।
