দেশে তখন ইংরেজ শাসন চালাচ্ছে। রেলগাড়ি, যান্ত্রিক যানবাহন সেভাবে প্রচলিত ছিল না, তখন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি জেলা এবং ঘাটাল সহ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল শিলাবতী নদী। রূপনারায়ণ নদী রানীচক, কোলাঘাট এবং তমলুক হয়ে গেঁওখালিতে হুগলি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।হুগলি-রূপনারায়ণ-শিলাবতী নদী ছিল প্রধান পরিবহন পথ। এ পথে কলকাতা থেকে প্রয়োজনীয় মালপত্র আমদানি এবং ঘাটাল ও তার পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে উদ্বৃত্ত পণ্য রফতানি করা হত। নৌকা, পানসি এবং স্টিমার ব্যবহার করে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন করা হত। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাবতী নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল বিদেশিদের আস্তানা, যা ঘাটালের ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। নীল চাষ থেকে রেশম ও মসলিনে অগ্রগতি তখন সবই সম্ভব হয়েছে এই ভাসাপুলের মাধ্যমে।
advertisement
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে তুমুল বৃষ্টি…! চোখ রাঙাচ্ছে দামোদর, তড়িঘড়ি ফিল্ডে পুলিশ, যা করলেন এলাকায়
শোনা যায় যে পন্ডিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাসাপুলের উপর দিয়ে পারাপার করার অনুমতি ছিল। স্বদেশী আন্দোলন ও শিল্প বিপ্লবের পর ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শিল্পে ভাটা পড়ে এবং ডাচরা ধীরে ধীরে বাণিজ্যে সংকোচন ঘটায়। ইংরেজদের প্রভাব বেড়ে যায় এবং তারা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। তারই ফল হিসেবে বেঙ্গল ফেরী এ্যাক্ট ১৮৮৫ এর ৬নং ধারা মোতাবেক, ১৯০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, পুলটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। স্বাধীনতা লাভের প্রায় ১৩ বছর পর, ১৯৬০ সালে শিলাবতী নদীর উপর আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যাসাগর সেতু নির্মাণ করা হয় যা ভাসাপুলের চাপ কমিয়েছে। যদিও এর উপযোগিতা নিয়ে আজ প্রশ্ন থাকতে পারে, ঘাটাল বললে প্রথমেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে ভাসাপুল। শিলাবতী নদীর ওপর তৈরি ভাসাপুল, যা আজও ঘাটাল শহরের ঐতিহ্যের প্রতীক।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এই পুলটি অনেকবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাও এই ভাসাপুলের নানা ঐতিহ্য, আবেগ, ইতিহাসের সাক্ষী। ঘাটাল পুরসভা ভাসাপুলের রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং বিভিন্ন দিনে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ভাসাপুলকে পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় হেরিটেজ কমিশন এটিকে হেরিটেজের মর্যাদা দেয়। ঘাটালের ঐতিহ্যবাহী এই নিদর্শনটি দিনের পর দিন সকলের হৃদয়ে উজ্জ্বল হয়ে থেকে যাবে।
মিজানুর রহমান