সম্প্রতি বর্ধমানে সাড়া ফেলেছে ‘শিক্ষীত আলুভাজা’- নামটা শুনেই অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন আলুভাজা আবার শিক্ষিত? এটা আসলে এক হাল না ছেড়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর লড়াই, যা হয়তো আপনাকেও ভাবিয়ে তুলবে।
আরও পড়ুনঃ সাইকেলে চেপে কেদারনাথ! পরনে গেরুয়া পোশাক, ভোলেবাবার নাম নিয়ে যাত্রা শুরু অশোকনগরের দুই বন্ধুর
বাংলায় এমএ-র পাশাপাশি রয়েছে একাধিক ডিগ্রি। তবুও জোটেনি চাকরি। তাই হাল না ছেড়ে রূপায়ণ বিশ্বাস খুলেছেন ‘শিক্ষীত আলুভাজা’-র দোকান। নাম দিয়েছেন ‘শিক্ষীত বেকারের শিক্ষীত আলুভাজা’। ভালোবেসে এই ব্যবসা করলেও তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি ক্ষোভ।
advertisement
যুবক জানান, তিনি বাংলায় এমএ পাশ। স্নাতকোত্তরের পর আরও কিছু ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও টেট পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার স্বপ্নটা অধরাই থেকে গিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো ইন্টারভিউ ভালো দেননি। কিন্তু পরে র্যাঙ্ক বেরোলে দেখেন, তাঁর চেয়ে কম র্যাঙ্কের লোকেরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।
নদিয়া জেলার রানাঘাটের বাসিন্দা রূপায়ণ বিশ্বাস। চাকরি না পেলেও হাল ছাড়েননি তিনি। প্রথমে বাবার মুদিখানা দোকান সামলাতেন। একদিন হঠাৎ সেই দোকানে চুরি হয়ে যায়। এরপরে গ্রামে একটি ছোট্ট মোবাইলের দোকান খোলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সেই দোকানেও চুরি হয়। এরপর কিছুটা ক্ষোভ থেকেই এই স্পাইরাল আলুর দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নাম দেন ‘শিক্ষীত বেকারের শিক্ষীত আলুভাজা’। বর্তমানে এই ব্যবসাকেই ভালোবেসে বিভিন্ন মেলায় মেলায় ঘুরে দোকান দেন রূপায়ণ। কিন্তু এই দোকানের নাম ‘শিক্ষীত বেকারের শিক্ষীত আলুভাজা’ কেন ? কেনই বা বাংলায় এমএ হওয়া সত্ত্বেও তার দোকানের নামে বানান ভুল? এর পিছনেও রয়েছে এক কাহিনী।
আরও পড়ুনঃ ৩ বছরেই মুখে গীতার শ্লোক, স্পষ্ট সংস্কৃত উচ্চারণ! কৃষ্ণ ভক্ত এই খুদের ‘ট্যালেন্ট’ দেখলে মুগ্ধ হবেন
রূপায়ণ শিক্ষিত হলেও চাকরি পাননি। অন্যদিকে শিক দিয়ে গেঁথে এই স্পাইরাল আলু ভাজা বানাতে হয়, তাই তিনি এই দোকানের নাম দিয়েছেন ‘শিক্ষীত বেকারের শিক্ষীত আলুভাজা’। কিন্তু বানান ভুল কেন? এটাও কিছুটা একদিকে শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পাওয়ার ক্ষোভ, অন্যদিকে নেগেটিভ পাবলিসিটির মাধ্যমে সকলের নজর কাড়ার চেষ্টা।
যুবক বলেন, এখন তো অনেক ভুলভ্রান্তিতে দৃষ্টি আকর্ষণ হচ্ছে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কত লোক ভুল করছেন, অন্যায় করছেন, তা সত্ত্বেও তাঁরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাহলে আমি যদি সামান্য একটা বানান ভুল করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবসা বাড়াতে পারি তাহলে দোষ কোথায়?
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
সব মিলিয়ে, এটা যেন এক নীরব প্রতিবাদ, একটা চাপা ক্ষোভ যা শব্দে প্রকাশ পাচ্ছে। রূপায়ণের এই উদ্যোগ শুধু একটা ব্যবসার গল্প নয়, এটা হয়তো হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারের মনের কথা। যারা চাকরি না পেয়েও থেমে থাকেননি, বরং নতুন করে শুরু করেছেন। সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন নিজেকেই পথ তৈরি করে নিতে হয়। তাঁর এই পথচলা হয়ত আগামীদিনে অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।