উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর ভোরের দিকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে উত্তকাশিতে নির্মীয়মান সুড়ঙ্গের একটি অংশ। জাতীয় সড়কের ওপর এই সুড়ঙ্গে নামে ধস। চারধাম প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত তৈরি হচ্ছে উত্তরকাশী থেকে যমুনেত্রী ধাম যাওয়ার জন্য। এই সুড়ঙ্গ তৈরি হলে দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমবে। সেখানেই কাজ করছিলেন ৪০ জন শ্রমিক। কিন্তু আচমকা সে জায়গায় ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে ধস নামে। তার ফলেই ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়েছেন ৪০ জন শ্রমিক। যার মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন শ্রমিকও।
advertisement
আরও পড়ুন –রেশন দুর্নীতি তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড়? ইডির জালে এবার ‘যাঁরা’…! জেলায় জেলায় জাল
কিন্তু কেন ইসিএলের কাছে তাদের উদ্ধার করার জন্য আবেদন এসে পৌঁছল? বিষয়টি যারা মিশন রানিগঞ্জ সিনেমাটি দেখেছেন, তারা কিছুটা বুঝতে পারবেন। কারণ ১৯৭৫ সালে রানীগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারিতে আটকে পড়েন ৬৫ জন শ্রমিক। তদানীন্তন ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিং গিল উদ্ধারের দায়িত্ব নেন আটকে পড়া শ্রমিকদের। ইসিএল এর কারখানায় তৈরি করানো হয় ক্যাপসুল নামের একটি বিশেষ ডুলি। সেই ডুলিতে ইঞ্জিনিয়ার গিল খনিতে নামেন। তারপর ক্যাপসুলের সাহায্যে উদ্ধার করা হয় ৬৫ জন শ্রমিককে। শেষে উঠে আসেন গিল। ইসিএলের সেই অভিজ্ঞতা উত্তরকাশিতে আটকে পড়া ৪০ জন শ্রমিককে উদ্ধারের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন – বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জলাশয় থেকে উদ্ধার তরুণীর পচাগলা দেহ, হঠাৎ চাঞ্চল্য
ইসিএল সূত্রে খবর, গত রবিবার এই কয়লা-মন্ত্রকের নির্দেশে কোল ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য ইসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং ইন্টারন্যাশনাল টার্নাল অ্যাসোসিয়েশনের আধিকারিকরাও আটকে পড়া শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনতে ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সাহায্য করবে ইসিএলের সদর দফতর? এই বিষয়ে সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কিভাবে উদ্ধার চালানো যেতে পারে বা কোন ধরনের ড্রিল মেশিন ব্যবহার করা হবে, ইত্যাদি বিষয়গুলি তাদের জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে যে ক্যাপসুল ডুলি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও আসানসোলের যে সংস্থা উদ্ধারের জন্য বিশেষ ড্রিল মেশিন সরবরাহ করেছিল, সেই সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও উদ্ধারকারী আধিকারিকদের কথা বলানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এটুকুই নয়। ইসিএলের আধিকারিকরা সরাসরি উদ্ধার কাজে হাত লাগাতেও প্রস্তুত। এই বিষয়ে ইসিএল এর মাইন্ড রেস্কিউ টিমের এক আধিকারিক বলছেন, মাটির নিচে দুর্ঘটনা অর্থাৎ খনি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ইসিএলের রেসকিউ টিম এবং আধিকারিকরা যথেষ্ট দক্ষ। তাদের এই ধরনের উদ্ধার কাজে বড় অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ইসিএল সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানিয়েছেন।
এখানেই জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, শুধু মহাবীর কোলিয়ারি নয়, ইসিএলের মাইন্ড রেসকিউ টিমের বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ কর্মীরা আরও নানান উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছেন। কয়েক মাস আগে মেঘালয়ে কয়লা খনিতে জল ঢুকে প্রচুর মানুষ আটকে পড়েছিলেন। তখন ইপিএলের দফতর থেকে পাম্প নিয়ে গিয়ে সেই জল বের করে উদ্ধার করা হয়েছিল আটকে পড়া শ্রমিকদের। ফলে শুধু মহাবীর কোলিয়ারি বা মেঘালয় নয়, উত্তরকাশির ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি ইসিএল কর্তৃপক্ষ। মাটির নিচে উদ্ধারের ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে তারা প্রস্তুত।
একইসঙ্গে কিভাবে উদ্ধার কাজ সহজ করা যায় এই বিষয়েও ওই আধিকারিক নিজের মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতায় বলে, যদি দুর্ঘটনাস্থলের পাশে ভার্টিকালি ড্রিল করা যায়, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো যাবে। আটকে থাকা কর্মীদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি যত দ্রুত ড্রিল করা সম্ভব হবে, ততো তাড়াতাড়ি আটকে পড়া শ্রমিকদের মনোবল বাড়বে। তাদের পরিবার পরিজনের কাছে আসার আলো পৌঁছবে। শুধু এটুকুই নয়, প্রয়োজনীয় খাবার-ওষুধ কম সময়ে পৌঁছনো যাবে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে।
নয়ন ঘোষ