শিশুদের স্মার্টফোনের প্রতি বাড়তে থাকা আসক্তি থেকে দূরে রাখতেই এই বিশেষ সচেতনতামূলক নাটকের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই নাটকে অংশগ্রহণ করে। নাটকের চরিত্রগুলি সহজেই ছাত্র-ছাত্রীদের মন কাড়ে। নাটকের কাহিনিতে দেখানো হয় এক মা ও তার ছোট মেয়ের দৈনন্দিন জীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন চাই ছোট্ট মেয়েটির। স্কুলে যাওয়ার আগে, এমনকি স্কুলে যাওয়ার সময়ও তার একটাই আবদার, স্মার্টফোন। মেয়ের কান্না আর জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় মা। শেষ পর্যন্ত তাকে ফোন দিয়েই শান্ত করতে হয়। স্কুল থেকে ফেরার পরেও পরিস্থিতি একই থাকে। খাওয়া-দাওয়া হোক বা পড়াশোনা,সবেতেই ফোন চাই ই চাই। বইয়ের চেয়ে ফোনই হয়ে ওঠে তার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী। ধীরে ধীরে পড়াশোনায় মন বসে না। খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: গুলি ছুড়ে প্রথম জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃতীয় খাদ্যমন্ত্রী, পুলিশ দিল পুরস্কার
নাটকের পরবর্তী অংশে দেখান হয় স্মার্টফোনের ভয়াবহ পরিণতি। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে মেয়েটি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখে জ্বালা। মাথা ব্যথা। চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা দেখা দেয়। উদ্বিগ্ন মা মেয়েকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণেই মেয়েটির চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হয়ে গেছে। এই দৃশ্য দেখে নাটক দেখতে থাকা শিশুদের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে কত বড় ক্ষতি হতে পারে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এই উদ্যোগ সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমন কল্যাণ প্রধান বলেন, “আজকের দিনে শিশুদের স্মার্টফোন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা কঠিন। কিন্তু সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব। নাটকের মাধ্যমে শিশুরা খুব সহজে বিষয়টা বুঝতে পারে। আমরা চাই তারা পড়াশোনা, খেলাধুলা আর সৃজনশীল কাজে বেশি সময় দিক।” তিনি আরও জানান, অভিভাবকদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বিদ্যালয়ের এই অভিনব উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরাও। তাঁদের মতে, এমন সচেতনতামূলক প্রচেষ্টা শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ে অভিভাবকরা ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন। ফলে অনেক সময় তাঁরা নিজের সন্তানের হাতে ফোন তুলে দেন। যা অজান্তেই বিপদ ডেকে আনে। পরে তা শিশুদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তারপর এই অভ্যাস বড় সমস্যার আকার নেয়। এক্ষেত্রে তাঁরা বলছেন, অভিভাবকদের কিছু সাবধানতা এবং কৌশলে মুক্তি পাওয়া যাবে এই সমস্যা থেকে। প্রথমত, সন্তানের জেদ প্রশ্রয় দিলে চলবে না। তাঁদের ফোন থেকে মনসংযোগ সরাতে হবে। তার জন্য বাচ্ছাদের সঙ্গে সারাদিনে কিছুটা সময় কাটাতে হবে। তাদের হাতে ফোনের বদলে বিভিন্ন লার্নিং টয় তুলে দিতে হবে। এছাড়াও অঙ্কন, গানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে। একইসঙ্গে তাঁরা বলছেন, সন্তানদের বকাবকি করলে চলবে না। বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের মন অন্যদিকে ঘোরাতে হবে। খুব দ্রুত ফল আশা করলে চলবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের আসক্তি দূর হবে।





