শিক্ষক অলকেশবাবুর প্রতিদিনের জীবনটাই যেন সংগ্রামমুখর। ক্লাসে তিনি পড়ান উৎসাহ আর আন্তরিকতা দিয়ে। মাঝেমধ্যেই গানের সুরে পড়ুয়াদের মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। তাঁর সুরেলা কণ্ঠে ছাত্রছাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে হাততালি দেয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যেন বন্ধুর মতো। তাই পড়ুয়ারাও তাঁকে ভালবাসে, সম্মান করে। শিক্ষকতার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা এতটাই গভীর যে, সামান্য বেতনেও তিনি এই পেশা ছাড়তে চান না। তবে পরিবারে বাবার দায়িত্ব পূরণ করতে তাঁকে বাকি সময়ে অন্য আয়ের পথ খুঁজতেই হয়।
advertisement
মঞ্চই তাঁর আরেক পরিচয়। স্থানীয় একটি বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত অলকেশবাবু সুযোগ পেলেই গিটার হাতে মঞ্চে উঠে পড়েন। দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে গান গাইলে চারদিক যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। করতালির শব্দে ভরে যায় পরিবেশ। তাঁর গলায় এমন এক জাদু আছে, যা মুহূর্তেই দর্শকদের মন জয় করে। ব্যস্ত দিনের মাঝে রাতের অনুষ্ঠান, আবার পরদিন সকালেই স্কুলে ক্লাস নেওয়া— এভাবেই চলছে তাঁর একাধারে শিক্ষকতা ও গায়ক জীবনের দ্বৈত ভূমিকা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
কিন্তু শুধু শিক্ষকতা ও গানেই সংসার চলে না। তাই সময় পেলেই তিনি দোকানে বসে জামা-কাপড় বিক্রি করেন। পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে— রয়েছে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, বৃদ্ধা মা। সংসার চালাতে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত আয়ের জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হয়। তবুও কোনও অভিযোগ নেই তাঁর গলায়। বরং হাসিমুখেই বলেন, “বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে যে বেতন পাই, তাতে সংসার চালান সম্ভব নয়। তাই বাকি সময়ে যা পারি করি।” তাঁর এই বহুরূপী রূপ, এই লড়াই, এই নিষ্ঠা দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। সমাজের চোখে তিনি শুধু শিক্ষক নন— এক নিরলস সংগ্রামী যোদ্ধা, যাঁকে দেখে সত্যিই স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করবে।





