পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বসন্তপুর জুনিয়র হাই স্কুল। দ্বিজেন্দ্রবাবুর উদ্যোগে ও তাঁর পেনশনের টাকাতেই পথচলা শুরু এই স্কুলের। অবসরের পর স্থানীয় ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে স্কুল গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করেন তিনি। কারণ জামালপুরের পাড়াতল ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বসন্তপুর। একদা এই গ্রামের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা লাভের ভরসা বলতে ছিল শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক স্কুল। আশপাশে কোনও জুনিয়র হাই স্কুল ছিল না। তাই লেখাপড়ার জন্য বসন্তপুর ও তার সংলগ্ন বেত্রাগড়, সজিপুর প্রভৃতি গ্রামের ছেলে মেয়েদের পাঁচ কিলোমিটার দূরে জামালপুর বা সেলিমাবাদ হাই স্কুলে যেতে হত।
advertisement
আরও পড়ুনঃ মাথায় জটা, হাতে বাদ্যযন্ত্র, বাউল রূপে দেবী দুর্গা! কোথায় মিলবে মায়ের এমন দর্শন?
এই দূরত্বই স্কুল বিমুখ করে তুলছিল এলাকার দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলে মেয়েদের।এলাকায় একটা স্কুলের জন্য নানা জায়গায় দরবার করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রবাবু। অবশেষে একটি স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের ঘর থেকে পথচলা শুরু বসন্তপুর জুনিয়র হাই স্কুলের। পরে একটি সরকারি জায়গায় নিজের পেনশনের টাকা থেকে একটি চালা ঘর তৈরি করে শুরু করেন স্কুল। পরে ধীরে ধীরে সরকারি অনুমোদনে স্কুলের স্থায়ী ভবন গড়ে উঠলেও মেলেনি স্থায়ী শিক্ষক।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রথম দিকে কয়েকজন গেস্ট টিচার থাকলেও তারাও একটা সময় পর অবসর নিয়েছেন। যখন শিক্ষকের আকালে ধুঁকছে এই স্কুল, প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম, এই অবস্থায় ওই স্কুলের হাল ধরেতে দ্বিজেন্দ্রবাবুর পাশে এসে দাঁড়ান পাঁচ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতী। বেতনের প্রত্যাশা না করে শুধুমাত্র এলাকার পড়ুয়াদের মুখ চেয়ে ওই পাঁচ শিক্ষিত বেকার সরকারি স্কুলে পড়িয়ে যাচ্ছেন। বহু বার আবেদনের পর যদিও বর্তমানে গত কয়েক মাস আগে একজন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে এই স্কুলে। কিন্তু আর কোন স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে এই স্কুল তা নিয়ে চিন্তায় সকলে।
শিক্ষা দফতরের কাছে তাদের আবেদন, যাতে এই স্কুলে আরও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অথবা এই পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয় যাতে তাদের এই প্রচেষ্টা হারিয়ে না যায়। বাঁচিয়ে রাখা যায় স্কুলকে। এই পাঁচজন শিক্ষকের নিঃস্বার্থ পরিষেবা এবং দ্বিজেন্দ্রবাবুর নিরলস প্রচেষ্টা বাঁচিয়ে রেখেছে জামালপুর ব্লকের বসন্তপুর জুনিয়র হাই স্কুলকে। এই শিক্ষকরা প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি ব্রত।