গড় জঙ্গলের ওই ইতিহাসের সঙ্গে একাধিক দুর্গাপুজোর নানান কাহিনি জড়িয়ে আছে।
গড় জঙ্গল লাগোয়া এই গ্রাম লোহাগুড়ি। একসময় ওই গ্রামের নাম ছিল “লোহার গড়”। সেখানে লোহার কারিগরদের আস্তানা ছিল। ওই কারিগররা লৌহ আকরিক গলিয়ে তৈরি করতেন তরোয়াল, বল্লব ও বর্শা থেকে শুরু করে কামানও। সামন্তযুগের যে কোনও রাজ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা হত এখানে। এই সমস্ত লোহার তৈরি অস্ত্র যেত সামন্ত রাজা ইছাই ঘোষের দরবারে। তাঁর শাসনকালে গড়া হত অসংখ্য যুদ্ধাস্ত্র, আর লোহাগুড়ি তখন ছিল সেই অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র। ইতিহাসের সেই সাক্ষী নিয়ে গ্রামের নামের মধ্যেই রয়ে গেছে আকরিক লোহার ছাপ।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
কালের স্রোতে থেমে গিয়েছে যুদ্ধের হুঙ্কার, নিভে গিয়েছে অস্ত্র গলানোর সেই ভাটি। আজও লোহাগুড়ির সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো সেই অতীতকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
পরিবারের প্রাচীন সেই ‘খাড়া’ ও ‘কামান’ এখনও দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।প্রতিবছর অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে ঐতিহ্য মেনে সেই কামান দাগা হয়। মুহুুর্তের জন্য গর্জে ওঠা সেই আওয়াজ যেন ফিরিয়ে আনে সামন্তযুগের প্রতিধ্বনি। কামানের শব্দে যেন শোনা যায় ইছাই ঘোষের রাজত্বের গৌরবগাথা, যুদ্ধের উত্তাপ আর লোহার আঘাতের ধ্বনি। তবে কীভাবে এই তোপ দাগা হয় জানেন?
এটা শুধু দুর্গাপুজোর আচার নয়, বরং ইতিহাস, আবেগ আর ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। সরকার পরিবারের অষ্টমতম বংশধর বরিষ্ঠ জগবন্ধু সরকার জানান, ওই পুজো শুধু উৎসব নয়, বরং লোহাগুড়ির ঐতিহ্য, ইতিহাস আর গর্বের সংরক্ষণ।
কামানের গর্জনে যেন তাঁদের পূর্বপুরুষদের কথা মনে করিয়ে দেয়। রীতি অনুযায়ী এখনও দুর্গাপুজোর আগে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ জানান হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র গ্রামবাসী এই পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠেন। প্রতিবছর প্রাচীন রীতিনীতি মেনে নতুন প্রজন্মও এই পুজোর ইতিহাস বহন করে চলেছে।
দীপিকা সরকার