ছোটবেলা থেকেই মৃৎশিল্পীদের মূর্তি গড়ার কাজ দেখত অরিজিৎ। তখন থেকেই তাঁর মনে জন্মায় এক কৌতূহল। প্রশ্ন জাগে, ‘এত পরিশ্রম করে মাটির মূর্তি বানানো যায়, তাহলে আমি কি নিজের মতো সহজ এবং হালকা কিছু দিয়ে মূর্তি বানাতে পারি না?’ এই ভাবনা থেকেই খুদের যাত্রা শুরু।
advertisement
ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময়েই প্রথম ঠাকুর বানানোর চেষ্টা করে অরিজিৎ। তখন শুধু কাগজ আর পেনসিলেই দেবী দুর্গার অবয়ব আঁকত সে। এরপর সময়ের সঙ্গে নিজেকে দক্ষ এক কাগজশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছে। এবারের দুর্গা মূর্তিটি সে এক মাসের মধ্যে বানিয়েছে। কাগজ, পিচ বোর্ড, শোলা ও বিভিন্ন রঙিন আর্ট পেপার দিয়ে সম্পূর্ণ মূর্তিটি বানানো হয়েছে।
কাঠের কাঠামোর পরিবর্তে শোলা ও বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করেছে অরিজিৎ। কার্ডবোর্ডে মূর্তির নিচের পাটাতন তৈরি হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ার হাতে তৈরি এই মূর্তি দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনই অনেকটা হালকা ও পরিবেশবান্ধব। মূর্তি বানানোর সব উপকরণ সে নিজেই সংগ্রহ করে। স্থানীয় বাজারে সবকিছু পাওয়া যায় না বলে খুদে শিল্পীকে কৃষ্ণনগর যেতে হয়।
অরিজিতের কথায়, ‘মায়ের মূর্তি নিজে বানানো, নিজে সাজানো আর নিজে পুজো করার আনন্দই আলাদা’। শুধু মূর্তি গড়াই নয়, মূর্তির অলংকরণেও সে নিজস্ব কল্পনা মিশিয়ে দেয়। এই বছর মা-কে সাজাতে কলকাতার খান্না থেকে কাতান বেনারসি কিনে এনেছে। প্রতিটি অলংকার, সাজসজ্জা- সবকিছুতেই তাঁর পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট।
অরিজিৎ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই শিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। তাঁর লক্ষ্য, একটি নামী আর্ট কলেজে পড়াশোনা করা এবং নিজের দক্ষতাকে আরও পরিণত করে তোলা। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের আর্ট তৈরি করে। সেগুলি তাঁর বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বহুবার প্রশংসিত হয়েছে।
অরিজিতের মা মৌসুমী সাহা জানান, ওঁকে আমরা কোনও কিছুতে বাধা দিইনি। পাঁচ দিনই ও পুজো করবে। যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করব। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম ও কাগজ দিয়ে জিনিসপত্র বানাতে খুব ভালোবাসে। প্রথম দিকে আটকালেও যখন দেখি সত্যিই ধীরে ধীরে ওঁর শিল্পের দক্ষতা বাড়ছে, তারপর থেকে আর আটকাই না। ওঁর যেটা ইচ্ছে সেটাই করতে বলেছি। এই বছর তুলনামূলক একটু বড় মূর্তি বানিয়ে ফেলেছে। ওঁর খুব ইচ্ছে ছিল এই মূর্তিটি বানানোর। আমাদেরও খুব ভাললাগে, আমরা ভীষণ আনন্দিত। প্রতিবছর দুর্গাপুজোর সময় এইভাবেই নিজের হাতে ঠাকুর বানায় এবং ঘরের মধ্যেই অল্প পরিসরে মাকে পুজো করে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পুজোর শেষে একটি ছোট্ট ভ্যানে করে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে বিসর্জন হয়। বহু মানুষ তাঁর তৈরি ঠাকুর দেখতে আসে, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে জানায় অরিজিৎ। এই কিশোর শিল্পীর শিল্পনৈপুণ্য ও নিষ্ঠা ফের একবার মনে করিয়ে দেয়, প্রতিভা বয়সের অপেক্ষা করে না। শুধু দরকার অনুপ্রেরণা, অধ্যবসায় ও ভালবাসা- তাহলেই হাতের মুঠোয় ধরা দেয় সাফল্য। শান্তিপুরের এই খুদে শিল্পীর হাত ধরে ফের যেন প্রমাণ হল, শিল্পের প্রকৃত রূপ কল্পনা ও সাধনা।