বিশ্বাস, কোলে বসলে সারা বছর শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ থাকে। এভাবেই প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বারাসতের দক্ষিণপাড়ায় হয়ে আসছে শিবকুঠির দুর্গাপুজো। তবে এর পিছনেও রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, মোঘল সম্রাট আকবর বারো ভুইঁয়াদের মধ্যে ১১ জনকে বশে এনেছিলেন। কিন্তু, যশোরের অধিপতি প্রতাপাদিত্যকে বাগে আনতে পারেননি। প্রতাপাদিত্যর প্রধান সেনাপতি ছিলেন সর্দার শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। মোঘল সম্রাটের উদ্দেশ্য ছিল প্রতাপাদিত্যকে পরাস্ত করা।
advertisement
ছলে বলে রাজা প্রতাপাদিত্য ও শঙ্করকে বন্দি করে দিল্লি নিয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান যশোরেশ্বরী কালীর মূর্তিও। তারপরই মারা যান আকবর। অপরদিকে, বন্দি অবস্থায় প্রতাপাদিত্যেরও মৃত্যু হয়। আকবর-পুত্র জাহাঙ্গিরের নির্দেশে শঙ্করের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয়। তাঁর কারাদণ্ডের সময়টা ছিল পিতৃতর্পণের কাল। বন্দি শঙ্কর সম্রাটের কাছে তর্পণ করার আর্জি করেন। সেই আবেদন নাকচ করে দেন আকবর পুত্র জাহাঙ্গির। ব্যথিত শঙ্কর কারাগারেই আমরণ অনশন শুরু করেন। আকবরের স্ত্রী যোধাবাঈ ছেলে জাহাঙ্গিরকে শঙ্করের আবেদন অনুমোদনের জন্য নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: মরুভূমির মধ্যে ক্যাকটাসের জঙ্গলে হারিয়ে গেছে বিড়ালটি, খুঁজে পেলে আপনি জিনিয়াস!
সেনা প্রহরায় যমুনার তীরে শংকর তর্পণ করেন। শঙ্করের মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। সেই ভিড়ে ছিলেন বোরখা পরিহিতা যোধাবাঈও, মন্ত্র শুনে মুগ্ধ হন তিনিও। সেই রাতেই রাজমাতা স্বপ্নে দেখেন, তিনি দুর্গাপুজো করছেন। স্বপ্ন ভেঙে যেতেই তাঁর মনে পড়ে শঙ্করের কথা। কারাগারে গিয়ে তিনি শঙ্করকে দুর্গাপুজো করার নির্দেশ দেন। শিবের উপাসক শঙ্কর প্রথমে রাজি হননি। পরে তিনি পুজো করতে শুরু করেন। শঙ্করের পিতৃভিটে ছিল বারাসতে। শিবের উপাসক হয়েও তিনি দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে এই পুজো শিবেরকুঠির দুর্গাপুজো নামেই পরিচিত।
পুজোর কদিন প্রতিদিনই বাড়িতে ভোগ হয়, কিন্তু দশমীর দিন উমা বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন পান্তা ভাত ও কচু শাক খেয়ে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দেবী প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়। দশমীতে বিসর্জনের আগে গোল করে উমাকে অঞ্জলি দেওয়া হয়। আর সেক্ষেত্রে বাড়ির বা পাড়ার বিধবারাও শামিল হন। মাকে সিঁদুরদান করতে পারেন তাঁরাও। তারপরই মাকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। আগে বলি হলেও, এখন সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে বারাসাতের এই চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো অন্যতম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
Rudra Narayan Roy