সারা বছর শুনশান থাকলেও পুজোর দিনগুলোয় প্রাণ পায় কালিকাপুর জমিদার বাড়ি। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তখন দুর্গাদালান হয়ে ওঠে জমজমাট, আলো ঝলমলে।
চারদিকে শাল, পিয়াল, মহুয়ার ঘন জঙ্গল। তার ভেতর ছোট্ট একটা গ্রাম কালিকাপুর। সেখানেই বিশাল এলাকা জুড়ে সাত মহলা জমিদার বাড়ি। সামনে মানানসই পেল্লায় নাটমন্দির। প্রবীণ স্থাপত্যে সাদা-লালের নতুন পোঁচ। তার ভেতর ধীরে ধীরে প্রাণ পাচ্ছেন মা দুর্গার প্রতিমা।
advertisement
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। বর্ধমান রাজের দেওয়ান তখন পরমানন্দ রায়। ইজারায় হাতে এল বিরাট জঙ্গল। সেই জঙ্গল কেটেই তৈরি হল বসত। তৈরি হল পুকুর, বাগান, সাত মহলা প্রাসাদ। আর হল দুর্গামণ্ডপ।
আরও পড়ুন- বাজার চলতি রুম ফ্রেশনারের বদলে এগুলি ব্যবহার করুন, ঘর সুগন্ধে ম ম করবে
রায় পরিবারের বাসিন্দা সুবীরকুমার রায় জানালেন, ‘ওঁরা আদতে ছিলেন পাশের গ্রাম মৌক্ষিরার বাসিন্দা। সেখানে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। বন্যার প্রকোপ বাড়ছিল। তাই কালিকাপুরে চলে আসেন।
সাত ছেলের জন্য তৈরি হয় সাত মহলা বাড়ি। তৈরি করা হয় দুর্গামণ্ডপ। শুরু হয় জাঁকজমকের পুজো। দুর্গা পুজোর চারদিন নাট মন্দিরে চলত নানা অনুষ্ঠান। যাত্রা, পালাগান, কবি গানের আসর বসতো। বন্ধু জমিদাররা নিমন্ত্রিত হয়ে আসতেন।
জমিদার বাড়ির মহিলারা দোতলার খড়খড়ির আড়াল থেকে সেইসব অনুষ্ঠান দেখতেন। এই জমিদার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই আসে শ্যুটিংয়ের দল। অনেক সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন- ষষ্ঠীতে জমজমাট ধোঁয়া-ওঠা ভাতের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির বেগুন কোরমা, রইল রেসিপি
আট পুরুষের ঐতিহ্যে এখন জাঁকজমক কমেছে। তবে রীতি পরম্পরা বজায় রয়েছে সমানভাবেই। কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে দশভূজার আবাহন শুরু হয় মহালয়ার সাতদিন আগেই। সেদিন বলি হয়।
উৎসব চলে টানা পনেরো দিন। সুবীরবাবু জানালেন, ‘ষষ্ঠী থেকে নবমী, চারদিন ছাগ বলি হয়। পুজো হয় ষোড়শ উপাচারে। কলা বউ আসে পালকিতে চড়ে। সমস্ত নিয়মই নিষ্ঠা ভরে মানা হয়।