কিন্তু এবছর সেই আনন্দের জায়গায় এসেছে হতাশা, ক্ষতি আর দুশ্চিন্তা। ঘূর্ণিঝড় থেকে বৃষ্টি—প্রকৃতি যেন একের পর এক আঘাত হেনেছে উপকূল শহরটিতে। ফলে ভাটার টান পড়েছে দিঘার হোটেল ব্যবসায়।
পুজোর ছুটির শুরুতেই হোটেল মালিকরা ভেবেছিলেন, আগের মতই এবারও বুকিংয়ের বন্যা বইবে। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় সেই আশা ভেস্তে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’-র প্রভাবে পুজোর ছুটির শেষ দিকেও পর্যটকরা দিঘায় আসতে পারেননি। অনেকে আগাম বুকিং করেও শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন। যাঁরা এসেছিলেন, তারাও প্রবল বৃষ্টি আর উত্তাল সমুদ্র দেখে নিরুপায় হয়ে একদিনের মধ্যেই ফিরে গেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন দিঘার শতাধিক হোটেল ব্যবসায়ী।
advertisement
দিঘার এক হোটেল ব্যবসায়ীর কথায়, “প্রতি বছর পুজোর সময় এই কয়েকদিনের ব্যবসায়েই আমরা বছরের একটা বড় অংশের খরচ তুলে নিই। কিন্তু এবছর ঝড়-বৃষ্টির জন্য সেই সুযোগটাই হাতছাড়া হয়েছে। অনেকেই লিজ নিয়ে ব্যবসা করি, এখন কিস্তি আর খরচের বোঝা আমাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।”
সত্যিই, দিঘার বহু হোটেল ব্যবসায়ী বছর চুক্তিতে হোটেল লিজ নেন। ভেবেছিলেন, নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পরে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে। তাই কেউ কেউ কয়েক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন নতুন সাজে হোটেল চালু করতে। কিন্তু মন্থার ধাক্কা যেন সব পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিয়েছে।
শুধু হোটেল নয়, এর সঙ্গে জড়িত দোকানদার, খাবারের দোকান, টোটো চালক, গাইড—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটা দুর্যোগ কেটে গেলে আমরা ভাবি এবার ঘুরে দাঁড়াবো, কিন্তু তার মধ্যেই আবার নতুন বিপর্যয় এসে পড়ছে।
আরও পড়ুন: ফসল তো নয়, যেন টাকার গাছ! ৬ মাসের পরিশ্রমেই ডবল, কনকপুরের চাষিরা ‘এই’ চাষ করে কামাচ্ছেন অঢেল টাকা
এখন দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীদের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে—“কবে হবে শান্ত দিঘা?” তারা ভাবছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ কি এবছরের শেষ দুর্যোগ? নাকি শীতের মরসুমেও আবার নতুন বিপদ অপেক্ষা করছে? কারণ শীতকালই দিঘার দ্বিতীয় পর্যটন মরসুম, সেই সময় যদি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকে, তাহলে পুরো বছরটাই ক্ষতির মুখে পড়বে উপকূলের এই পর্যটন ব্যবসা।
তবু আশা হারাননি দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা এখন শীতের মৌসুমের দিকে তাকিয়ে আছেন। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে হয়ত সারা বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু মন্থার পর দিঘার আকাশে যে দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছে, তা এখনও কাটেনি।





