আসলে নন্দলাল তাঁর মিষ্টি ব্যবহারের দ্বারা সকলকেই আপন করে নিয়েছিলেন, সেই ছেলেবেলা থেকেই। নিজের ব্যবহারের জন্য ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছেন কারও কাকু, কারও দাদা, কারও আবার ভাই। এক কথায় ক্রমে ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলে পাড়ার ছেলে নন্দ। তবে ঘরের ছেলে নন্দ যে আজ আর নেই তা কেউই ভাবতেই পারছেন না। অথচ কদিন পরেই জানুয়ারির শুরুতেই তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। তার আগেই আজ বৃহস্পতিবার নন্দ এসেছেন নিজের গ্রামে। তবে কফিনবন্দি হয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ গ্রামে এসে পৌঁছয় সিআরপিএফ জওয়ান নন্দলাল রানার মৃতদেহ। শোকের ছায়া গোটা এলাকায়।
advertisement
আরও পড়ুন- বাঁকুড়া থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে সায়ন্তিকার গাড়ি ! জখম তৃণমূল নেত্রী
গত সোমবার লাদাখে টহলরত অবস্থায় মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তমলুকের ছেলে, সিআরপিএফ জওয়ান নন্দলাল রানার(৩৬)। সোমবার সকাল নাগাদ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪২ নম্বর ব্যাটালিয়নের লাইনম্যান জওয়ান নন্দলাল রানার। নন্দলাল ছাড়াও ওই দলের আরও তিন সিআরপিএফ জওয়ান গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের সিআরপিএফ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
সিআরপিএফ জওয়ান নন্দলাল রানার মৃত্যুর খবর তমলুকের হরশঙ্কর গ্রামে আসা মাত্রই শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের পাশাপাশি প্রিয় নন্দকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পাড়া-প্রতিবেশীরাও। আগে নন্দ যখনই বাড়ি এসেছেন, বাড়ির লোকজনের পাশাপাশি পাড়া- প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কাটিয়েছেন সুন্দর মুহূর্ত। আগামী ২ জানুয়ারি নন্দর বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হল না।
আরও পড়ুন- কেটে পড়ে গেল ব্যাগ, ঘাতক চিনা মাঞ্জার সুতোর আঘাত থেকে কোনওমতে বাঁচলেন চালক
নন্দলালের ছেলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। মাধ্যমিকে ছেলের ভাল রেজাল্ট যাতে হয় তাই ছুটি নিয়ে বেশি সময় দেওয়ার জন্যই বাড়িতে আসার কথা ছিল নন্দর। এক ছেলের পাশাপাশি নন্দের এক মেয়েও আছে। মাত্র ১৬ মাস বয়স তার। মেয়ের জন্মের পর কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন। ইচ্ছে ছিল, এবার এসে মেয়ের সঙ্গে ভাল করে সময় কাটাবেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না নন্দলালের।
জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে মেঘলা আকাশ ছিল লাদাখ জুড়ে। সকালেই পাহাড়ি রাস্তায় টহলদারির জন্য বের হয় ৪২নং ব্যাটেলিয়ানের চারজন জওয়ান। টহলদারির সময়ই আচমকা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেনা জওয়ানদের গাড়িটি। খাদে পড়েছিল জওয়ানদের গাড়িটি। গুরুতর জখম হন গাড়ির মধ্যে থাকা ৪ জন সেনা জওয়ান। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তমলুকের বাসিন্দা সেনা জওয়ান নন্দলাল রানার।
মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত করার পর আজ সেনাবাহিনীর তরফে তমলুকে নিজের গ্রামে আনা হয় তাঁর দেহ। এদিন সেনা জওয়ান নন্দকে শেষ দেখা দেখার জন্য গোটা গ্রামই রাস্তায় নেমে আসে। গ্রামবাসীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান নন্দলালকে। পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার জানানো হয়।