শুধুমাত্র ধূপ নয় মৌচাকের মোম সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় মোমবাতিও। বাড়িতে তৈরি করা ধূপই ব্যবহার করা হয় পুজোর কাজে। রাসায়নিকবিহীন সেই ধূপের গন্ধই আলাদা। ধূপ জ্বলেও দীর্ঘক্ষণ। আগে বাড়িতে তৈরি মোমবাতিও ব্যবহার করা হত পুজোর দিনগুলিতে কিন্তু বর্তমানে শুধু অষ্টমীর দিন ব্যবহার করা হয় বাড়ি তৈরি মোমবাতি।
advertisement
প্রায় ৩০০ বছর আগে বাংলার সুবেদার যখন শায়েস্তা খান তখন থেকে পুজোর সূচনা হয় পূর্ব বর্ধমানের দাস পরিবারে। দাস পরিবারের পূর্ব পুরুষরা আগে বাঁকুড়ায় থাকতেন।বাঁকুড়ায় থাকার সময় অর্থনৈতিক দিক থেকে সচল না থাকলেও বর্ধমানে আসার পর কাঁসা পিতলের ব্যবসা শুরু করেন তারা।পরে বর্ধমানের কাঞ্চন নগরে পুজোর সূচনা করেন।
তবে এই ব্যবসা এখন অতীত।বর্তমানে দাস পরিবারের কেউ আর কাঁসা-পিতলের ব্যবসার সাথে যুক্ত নয়।দাস পরিবারের পুজোতে আছে বেশ কিছু চমক। আগে মৌচাক থেকে মোম সংগ্রহ করে তার থেকে বাড়িতেই মোমবাতি তৈরি করে পুজোতে জ্বালানো হত। কিন্তু বর্তমানে অষ্টমী ও সন্ধিপুজোতে পরিবারের তৈরী মোমবাতি জ্বালানো হয়। ধূপ তৈরীতেও আছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য,ধূপে থাকবে না কোনও কেমিক্যাল উপাদান তাই পরিবারের বউ মেয়েরা জন্মাষ্টমীর দিন স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে ২০ রকম
ভেষজ উপাদন দিয়ে বাড়িতেই ধূপ তৈরি কাজ শুরু করেন।
সেই ধূপ পঞ্চমী থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত জ্বালানো হয়।দেবী এখানে দশভূজা।একচালার প্রতিমা।ডাকের সাজে দেবী দুর্গাকে সাজানো হয়। আগে বাঁশের দোলা করে কাহাররা কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে দশমীর দিন বিসর্জন করতেন দেবীকে। পুজোকে ঘিরে হত যাত্রাপালা ,বসত কবিগানের আসর।বর্তমানে সেই সব হয় না। তবে বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠেন।
আগের মতো জৌলুস না থাকলেও রীতিনীতি মেনে আজও পুজো করা হয় দাস পরিবারে। পুরনো রীতি মেনেই বাড়ি তৈরি ধুপ ও মোমবাত জ্বালানো হয় দেবীর সামনে। আর তার সুগন্ধেই যেন সকলেই ফিরে যান পুরনো সেই ইতিহাসের কাছাকাছি। বর্তমান সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও পুজোর কটা দিন তারা মিলিত হন কাঞ্চন নগরে তাদের পূর্ব পুরুষের বাড়িতে।