এক সময় মানুষের যাতায়াত বা জিনিসপত্র আদান-প্রদানে প্রধান মাধ্যম ছিল নদী বা জলপথ। বর্তমানে সড়ক বা আকাশ পথে যাতায়াতে বেশি নির্ভর মানুষ। জলপথের প্রচলন কম হলেও, এই বাংলায় বর্তমানে যাতায়াত এবং জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যেতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ রকম নৌকা প্রচলন রয়েছে এই বাংলায়। সে সমস্ত নৌকার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, বিস্তারিত জানাচ্ছেন নৌকা বিশেষজ্ঞ স্বরূপ ভট্টাচাৰ্য।
advertisement
পণ্য পরিবহণ ও জেলেদের মাছ ধরার কাজেও নৌকার ব্যবহার হয়ে থাকে৷ নৌকা প্রধানত কাঠ দিয়ে তৈরি৷ মাছ ধরার ডিঙ্গি আকারে ছোট, আবার পণ্য পরিবহণের নৌকা আকারে বেশ বড়৷ ছই বা ছাউনি তৈরিতে বাঁশ বব্যহার করা হয়৷ খোলকে জলনিরোধ করার জন্য আলকাতরা ব্যবহার করা হয়৷ লগি তৈরি হয় বাঁশ থেকে পাল তৈরি হয় শক্ত কাপড় জোড়া দিয়ে৷
গঠনশৈলী ও পরিবহণের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে, যেমন: ছিপ, বজরা, ময়ুরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙ্গি, পাতাম, বাচারি, রফতানি, ঘাসি, সাম্পান, ভেলা ও কলার ভেলা৷ বর্তমানে নৌকায় মোটর লাগানো শুরু হয়৷ এর ফলে নৌকা একটি যান্ত্রিক নৌযানে পরিণত হয়৷ এই যান্ত্রিক নৌকাগুলি শ্যালো নৌকা নামে পরিচিতি লাভ করে৷
বাতনাই নৌকা :- মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত নৌকা বাতনাই, যা পদি নামেও পরিচিত৷ এই নৌকাগুলো চালাতে ১৭ থেকে ১৮ জন মাঝি লাগত৷ এতে ১৪০ থেকে ১৬০ টন মাল বহন করা যেত৷ এই ধরনের নৌকায় থাকত বিশাল আকারের চার কোনা একটি পাল৷ যান্ত্রিক নৌকার ব্যবহারের কম খরচ ও কম সময় লাগে বলে এ নৌকার ব্যবহার কমে গেছে৷
সাম্পান:- বিভিন্ন ধরনের নৌকার মধ্যে সাম্পান সবচেয়ে পরিচিত৷ এদেশের লোকগীতি ও সাহিত্যে এই সাম্পানের উল্লেখ পাওয়া যায়| সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ায় সাম্পান৷ এই নৌকাগুলির সামনের দিকটা উঁচু আর বাঁকানো, পিছনটা থাকে সোজা৷ প্রয়োজনে এর সঙ্গে পাল থাকে আবার কখনও থাকে না৷ এক মাঝিচালিত এই নৌকাটি মাল পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হয়৷
বজরা নৌকা :- আগের দিনে জমিদার এবং বিত্তশালীদের নৌভ্রমণের শখের বাহন ছিল বজরা৷ এতে খাবার-দাবার ঘুমানো সহ নানা সুবিধা থাকত৷ কোনও পালও লাগানো হত৷ এতে চারজন করে মাঝি থাকত। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির কারণে বহু আগে এই নৌকার কদর কমেছে ৷
ডিঙি নৌকা :- সবচেয়ে পরিচিত নৌকা হচ্ছে ডিঙি৷ নদী পারাপার, মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজে এই নৌকাটি ব্যবহার করে৷ আকারে ছোট বলে এই নৌকাটি চালাতে একজন মাঝিই যথেষ্ট৷ মাঝে মধ্যে এতেও পাল লাগানো হয় | এখনো গ্রামগঞ্জে ডিঙির দেখা মেলে৷
কোসা :- বর্ষাকালে চরাঞ্চলে বা বিলে ডোঙা দেখা যায়৷ অন্যান্য নৌকার মতো এর গলুইয়ের কাঠ বড় থাকে না৷ অঞ্চল বিশেষে এর আকার ছোট বড় দেখা যায়| কোষা মূলত পারিবারিক নৌকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ হাটবাজার, স্বল্প দূরত্বে চলাচলের কাজে লাগে৷ একটি আদর্শ কোষা নৌকাতে আটজনের মতো যাত্রী বহন করা যায়৷
ইলশা নৌকা :- ইলিশ মাছ আহরণে জেলেরা এই নৌকা ব্যবহার করে থাকে বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে৷ এসব নৌকাও পাল লাগানো থাকে৷ এছাড়াও বেশ কিছু নৌকো রয়েছে যেগুলো বর্তমানে বহু প্রচলিত আবার কোনও নৌকা হয়তো হারিয়ে যাবার পথে৷
Rakesh Maity





