‘গরুর বিয়ে’ উপলক্ষে গরুগুলিকে সাজানো হয় বিভিন্ন রঙে৷ সাজিয়ে তোলা হল নানাভাবে৷ বাংলার প্রাচীন লোকসংস্কৃতিগুলির মধ্যে অন্যতম বাঁদনা পরব। মূলত ঝাড়খণ্ড এবং বাংলার ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার কুড়মি, ভূমিজ, লোধা, মাহাত প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই বাঁদনা উৎসব পালন করেন। আসলে বাঁদনা পরব হল হল গরুর বন্দনা বা গরুর সেবা। একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব। আমন ধান চাষের শেষে গরুদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি। বিনপুরের বাসিন্দা রাজীব মুর্মু বলেন ‘বছরের পর বছর ধরে এই উৎসব গ্রামে পালিত হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে বেশ কিছু লোকাচারও জড়িয়ে আসছে৷ আমরা ছোটবেলা থেকেই তা একই রকমভাবে দেখে আসছি৷’
advertisement
আরও পড়ুন : ভাই নয়, হল বোনফোঁটা! ত্রিশূল উপহার দিলেন কাউন্সিলর ‘দাদা’! কোথায় হল এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন? জানুন
প্রযুক্তির দুনিয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের রকমফের ঘটলেও গ্রামবাংলার প্রাচীন লোকাচার হিসাবে এই অনুষ্ঠানটির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি৷ শতাব্দীকাল ধরে এই নিয়মে, অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন স্থানীয় মানুষজন৷ তবে গরুকে যে ভাবেই সাজিয়ে তোলা হোক না কেন, ধান দিয়ে একটি বিশেষ মুকুট তৈরি করা এদিন বাধ্যতামূলক৷ একে ‘মোড়’ বলা হয়৷ জমি থেকে কতকগুলি পাকা ধানের শিষ এনে তা দিয়ে সুদৃশ্য ‘মোড়’ তৈরি করা হয়৷ পরে সেটি গরুর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয়৷
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
বিশেষত সন্ধের সময় এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়৷ কারণ, সকাল থেকেই বাড়ির মূল দরজা থেকে গোয়ালঘর পর্যন্ত আলপনা দিয়ে রাখেন বাড়ির বউ-মেয়েরা৷ এরপর দুয়ারে কিছু ঘাস দিয়ে রাখা হয়৷ সন্ধের সময় গরুর দল মাঠ থেকে ঘরে ফিরে এলে প্রথমে তাকে রং দিয়ে সারা গায়ে ছাপ দেওয়া হয়৷ তার পর সেই ঘাস খেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে৷ সন্ধের সময় গোবর দিয়ে একটি যমরাজের কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করে দুয়ারে রাখা হয়৷ তার উপর একটি প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া হয়৷ সেই প্রদীপের উপর পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে গোয়ালঘরে ঢোকে গরুর দল৷ এরপর বিভিন্ন ভাবে বন্দনা করা হয়৷ তাই ‘বন্দনা’ শব্দ থেকেও এই উৎসবের নামকরণ হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন৷