বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন। যাতে দুটি মানুষ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। তাই প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়েই নিজেদের মতো করেই দুটি হৃদয় এক করার প্রথা সারলেন বর্ধমানের কনে ও উত্তরপ্রদেশের পাত্র। সেই নজিরসৃষ্টিকারী বিবাহ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল বর্ধমানবাসী।
চিরাচরিত রীতি ভেঙে নতুন কিছু করে যুগলরা সমাজের বৃহত্তর অংশে নতুন বার্তা দিতে চাইলেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেই বিয়ে নেটিজেনদের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান, এই বার্তা দিতেই বৈদিক বিবাহ রীতিতে বদল এনে বিয়ের আসর মাতালেন বর্ধমানের এই কন্যা। তিনি কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। উত্তরপ্রদেশ নিবাসী মানবেন্দ্র সিংহ রাঠোরের সঙ্গে নিজের বাকি জীবনটা কাটানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন ইতিহাস তৈরি করে।
advertisement
ঠিক কী করলেন তাঁরা? বিয়ের জন্য মহিলা পুরোহিত এনে বিয়ের আসরে রীতিমতো নারী পুরুষের সমতার বার্তা দিতে চাওয়া হল। বর্ধমান শহরেই জাঁকজমকভাবে শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের পাত্রের বিবাহ আসর বসে। সেখানে মহিলা পুরোহিত বিয়ে দিলেন এই যুগলকে। বিয়েতে কোনও কন্যাদানের বালাই ছিল না। বরকে প্রদক্ষিণ করার নিয়মও ছিল না। এমনকি পান পাতায় মুখ ঢাকা নয় কন্যার। এখানে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় চাল দিয়ে কনেকে বলতে হয় না, বাবা-মায়ের সব ঋণ শোধ করলাম। নতুন বউকেও বর বলেন না, আজ থেকে তোমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলাম। বিয়ে মানেই যেখানে সানাইয়ের সুরে গমগম করে চারদিক, সেখানে এই বিয়েতে শোনা গেল পছন্দের সঙ্গীত। বিয়ের মন্ত্রপাঠেও রইলো অভিনবত্ব। তাতে সংস্কৃতের পাশাপাশি থাকলো বাংলা বা ইংরেজির ব্যবহারও।
আরও পড়ুন: দুয়ারে রেশন তো পাচ্ছেন, কিন্তু ঠকছেন না তো? বর্ধমানে মারাত্মক ঘটনা!
সমাজে নারী পুরুষের সাম্য বজায় রাখতে বৈদিক মতের বিবাহ বাড়ছে সমাজে। এদিন এমনই বিয়ের সাক্ষী থাকল বর্ধমানবাসী। মহিলা পুরোহিত রোহিনী ধর্মপালের তত্ত্বাবধানে এমনই বিয়ে এখন নতুন সংজ্ঞা বয়ে আনছে। সমাজ ভাবনার বদল আনতে বৈদিক নিয়মকেই প্রাধান্য দিলেন এই নব দম্পতি।
আরও পড়ুন: বিধানসভার প্ল্যানেই কলকাতা পুরসভা, প্রতি ওয়ার্ডের 'তুরুপের তাসে' নজর তৃণমূলের!
রোহিনী ধর্মপাল বলেন, নারী ও পুরুষ সমান। ইদানিং সেই সাম্য বজায় রাখার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। এদিনের বিয়েতে কন্যা পানপাতায় মুখ ঢেকে ছিলেন না। এখানে নারী ও পুরুষ একই সঙ্গে বিয়ের মণ্ডপের আসেন। পাত্রী শ্রেয়া ঘোষাল বলেন, বিদায়, কন্যাদানের মতো বিষয়গুলি সত্যিই এখন খুব অপ্রাসঙ্গিক। তাই অন্যভাবে বিয়ে অনুষ্ঠানের ইচ্ছা ছিল। তাই যোগাযোগ করি মহিলা পুরোহিতের সঙ্গে। তাঁর পরামর্শেই এভাবে বিয়ের আয়োজন হয়।পাত্র মানবেন্দ্র জানান, খুবই ভালো লাগছে। সমাজের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত। এদিন তারই দৃষ্টান্ত তৈরি হল।