কালীপুজো উপলক্ষে জেলা পুলিশের তরফে দেওয়া মিডিয়া পাস বয়কট করেছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। মিডিয়া পাসে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ তোলা হয় জেলা সাংবাদিকদের তরফে। জানা গিয়েছে, এবারের কালীপুজো উপলক্ষে বারাসাত জেলা পুলিশের তরফে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হলেও, গত কয়েকদিন ধরে বিকেল হতেই বারাসাত শহরের একাংশ প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়ছে।
advertisement
অভিযোগ, ডাকবাংলো মোড় থেকে হেলা বটতলা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। প্রায় ৫০০ মিটারের পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার। একই সঙ্গে, ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় যশোর রোডেও দেখা গিয়েছে তীব্র যানজট। রোগী নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীরা পর্যন্ত পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ছিল প্রশাসনিক অব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। কিন্তু জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া ও পাস বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ছড়ায় মিডিয়া মহলে।
এরপরই দেখা যায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। যা দেখে রীতিমতো একপ্রকার অবাক হয়ে যান পথ চলতি মানুষজনও। রাস্তায় মাইক হাতে নেমে পড়েন বারাসাত থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসাত পুলিশ জেলার অন্যান্য পুলিশদেরও দেখা গেল এই একই ভূমিকায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বারাসাত থানার আইসি ডাকবাংলো মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে রাস্তা সচল থাকার দৃশ্য রেকর্ড করছেন। এমনকি দু’জন দর্শনার্থীকে থামিয়ে তাদের কাছ থেকে সন্তুষ্টির বার্তাও নিচ্ছেন। তবে ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দর্শনার্থীরা কিছুটা ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের প্রশংসা করছেন।
আরও পড়ুনঃ ‘সুরসা রাক্ষসী দেবী’ থিমের কালীপুজো! পুরুলিয়ার মণ্ডপে একটুকরো ‘রামায়ণ’, বাড়ি বসেই হোক দর্শন
তবে নেটদুনিয়া বলছে অন্য কথা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ কি সাজানো দৃশ্য দেখাতে চাইছে? কেউ কেউ দাবি করছেন, ওই দর্শনার্থীদের আগেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। যানজটে জর্জরিত বারাসাতের বাস্তব চিত্র আড়াল করতে পুলিশের এই প্রচেষ্টা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে সব মহলে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বারাসাত জেলা পুলিশের তরফে কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে জেলা প্রেস ক্লাবের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের কাজে হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিপন্থী।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
অন্যদিকে, বারাসাতের একাধিক পুজো উদ্যোক্তারাও জানিয়েছেন, প্রতিবছর সংবাদমাধ্যমের লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমেই শহরের কালীপুজো রাজ্যবাসীর সামনে পৌঁছত। এ বছর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই সম্প্রচারে ভাটা পড়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং পুলিশের ‘ব্লগার’ ভূমিকায় এখন উত্তাল বারাসাতের প্রশাসনিক মহল। নেট নাগরিকরাও প্রশ্ন তুলছেন – পুলিশের আসল দায়িত্ব কি প্রশাসনিক কাজ সামলানো, নাকি ব্লগার সেজে প্রচারের মঞ্চে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা! সমাজের বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।