পোশাকের রং করার জন্যই ব্যবহার করা হত নীল। তবে নীল কিন্তু ভারতেরই এক দেশজ গাছ। কোলস্তয়ার্দি গ্রান্টের বিখ্যাত “রুরাল লাইফ ইন বেঙ্গল” বইতে নীল গাছের যে ছবি আঁকা হয়েছে তা দেখে এবং বর্ণনা পড়ে, নীল গাছকে অনেকটা কালমেঘ জাতীয় ছোট গাছের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
advertisement
সে যাই হোক, অবিভক্ত বাংলায় ১৮৬০ সালে যে নীল বিদ্রোহ হয়েছিল তার কথা আমরা ইতিহাস থেকে জেনেছি। দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পন” নাটকের মধ্যে অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের চরিত্র কেমন ছিল তার ধারণা পাওয়া যায়। অবিভক্ত বাংলায় যে দশটি জেলায় নীল চাষ হত, বাঁকুড়া তার মধ্যে ছিল না।
তবে এ জেলাতেও ১৮৩০ থেকে ১৮৭৫ সালের একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাঁকুড়ায় ১২,০০০ বিঘা জমিতে নীল চাষ হত। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত হত এক মণ নীল। সেই সময়ে মণ প্রতি নীলের দাম ছিল ২২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। মুদ্রাস্ফীতির হিসাব করলে বোঝা যায় এখন থেকে ১৫০ বছর আগে নীল অতন্ত্য মূল্যবান এক কৃষিপন্য ছিল।
দক্ষিণ বাঁকুড়ায় নীল চাষের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ডাক্তার জি.এন.চীক নামে এক ইংরেজ চিকিৎসক। ১৮২১ সাল থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত। তিনি বাঁকুড়া জেলার সহকারী সিভিল সার্জেন ছিলেন। এক সময়ে ডাক বিভাগেও উচ্চপদে কাজ করেছেন তিনি। সেই সময়ের রীতি মেনে নিজের কাজের বাইরে ডাক্তার চীক নীল ব্যবসা করতেন। দক্ষিণ বাঁকুড়ার বেশ কয়েকটি থানায় ছড়ান ছিল তাঁর নীলকুঠিগুলি।
এর মধ্যে ওন্দা থানায় ছিল ছ’টি নীলকুঠি। এগুলি ওন্দা, শুকলাই, চ্যামট্যা নিকুঞ্জপুর, সান্তোড় এবং কুরপায় অবস্থিত ছিল। ওন্দার নীলকুঠিটি ছিল ডাক্তার জ্যোতির্ময় মুখার্জীর বাড়ির ঠিক পিছনে। এছড়াও নীলকুঠি দেখা যায় রানীবাঁধ এবং রাইপুরে, নীল কুঠির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় সোনামুখী শহরের বুকে চৌধুরি পাড়ায়, এলাকার লোকেরাই নীল কুঠি বলে চিহ্নিত করেন।





