মাত্র ৯ বছর বয়সে খাবারের লোভ দেখিয়ে ও সমাজ বদলানোর স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁকে নিয়ে চলে গিয়েছিল বন্দুকধারীরা। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারেননি মীরা । কিন্তু মায়ের মন কী আর বোঝে? ভোট এলেই মেয়েকে অযোধ্যা পাহাড়ের বিভিন্ন জঙ্গলে খুঁজে বেড়ান মা মণি পাহাড়িয়া। তিনি চান, তাঁর মেয়ে বন্দুক ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুক। মেয়েকে একটিবার দেখতে পেলে তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চান মা।
advertisement
২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে জলপাই পোশাক পড়ে হানসান হাতে নিজের স্কোয়াড নিয়ে আমকোচা গ্রামে এসেছিল মীরা পাহাড়িয়া এবং গ্রামবাসীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিল ‘যাতে কেউ একটাও ভোট না দেয়’, কিন্তু তার সেই বারণ শোনেননি মা মণি পাহাড়িয়া। কারণ তিনি যে গণতন্ত্রের শরিক হতে চান। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই তো দুর্গম পথ পেরিয়ে ভোট দিতে যান ৭০ ঊর্ধ্ব মণি পাহাড়িয়া।
আরও পড়ুন: মলয়ের পথ ধরলেন সায়নী, চিঠিতে উল্লেখ সেই ‘একই কথা’! সকলকে চমকে দিলেন তৃণমূল নেত্রী
বহুকাল আগেই স্বামী নিখোঁজ। একমাত্র ছেলে পাহাড়ি ঝর্ণায় স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গিয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ও ছোট মেয়ে মাওবাদী দলের নেত্রী। তাই ছোট্ট কুঁড়েঘরে অভাবকে সঙ্গে নিয়েই কোনও রকমে বেঁচে রয়েছেন মণি পাহাড়িয়া। জঙ্গলে ঘুরে কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেই সংসার চলে তাঁর । ঘরের মেয়ে যাতে ঘরে ফিরে আসে এমনটাই চান গ্রামের বাসিন্দারাও। যদি কখনও মীরা ফিরে আসে তবে তাঁকে আর মাওবাদী দলের সঙ্গে যেতে দেবে না তাঁরা। তাঁরাও চান মায়ের কোলে মেয়ে ফিরে আসুক।
আরও পড়ুন: আর অপেক্ষা নয়, বৃহস্পতিতেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন মমতা! হবে অপারেশন
রাজ্যে পালাবদলের সময় অযোধ্যা-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক স্কোয়াডের মাওবাদী নেতা-নেত্রীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। কিন্তু মীরা পাহাড়িয়া আজও সমাজ বদলানোর স্বপ্ন চোখে নিয়ে স্কোয়াডের ডেপুটি কমান্ডার। বাংলা ও ঝাড়খন্ড মিলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ১৬টি মামলা। মাওবাদী ওয়ান্টেডের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। আর এই মাওবাদী মেয়ের ঘরে ফেরার আশায় প্রতিনিয়ত প্রহর গুনে চলেছেন মা মণি পাহাড়িয়া।
—– শমিষ্ঠা ব্যানার্জি