কালের নিয়মে কার্যত বন্ধের মুখে একাধিক লাইব্রেরি। বাংলা-ওড়িশা সীমানার এক গ্রন্থাগার বহন করে চলেছে প্রায় ১০০ বছরের ইতিহাস। গ্রন্থাগারের প্রতিটি পাতায় লেখা স্বাধীনতার নানা কাহিনী, ইতিহাসের নানা দিনের কথা।
এককালে এই শতবর্ষ প্রাচীন লাইব্রেরিতে এসেছেন একাধিক সাহিত্যিক থেকে বিপ্লবীরা। সেই লাইব্রেরি শতবর্ষে এসে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাজারও হাজার বই, পাঠক নিয়ে সগর্বে এগিয়ে চলেছে ইতিহাসের সাক্ষ্য নিয়ে।
advertisement
তখন পরাধীন ভারতবর্ষ। দেশের স্বাধীনতার জন্য গর্জে উঠছে যুবক যুবতীরা। লক্ষ্য পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করা। শুধু তাই নয় ইংরেজ হটানো যেমন তাদের কাছে লক্ষ্য তেমনইপ্রান্তিক এলাকায় পীড়িত মানুষদের সেবা করার উদ্যোগ নিয়েছিল তারা। বাংলা-ওড়িশা সীমানা এলাকা দাঁতনে আর্ত পীড়িত মানুষের সেবা এবং শরীর চর্চা ও এলাকায় পড়াশোনোর সংস্কৃতি তৈরি করতে কয়েকজন তরুণেরা বাঁশ, মাটি দিয়ে চালাঘর তৈরি করে শুরু করলেন পাঠাগার।
আরও পড়ুন- দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে মানুষের সাহায্যে কন্যাশ্রীরা, খুশি সরকারি পর্যবেক্ষক
আজ থেকে প্রায় ৯৯ বছর আগে ১৯২৬ সালে দাঁতনের বুকে তৈরি হয় লাইব্রেরি। আর্ত-পীড়িত মানুষদের শুধু সেবা আর্তি শুধু নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই লাইব্রেরীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই লাইব্রেরী কক্ষ একসময় হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের গোপন ডেরা।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে একটি সাধারণ সভা আয়োজিত হয়। এরপর থেকে একাধিক সভার পর সিদ্ধান্ত হয় দাঁতনে সমাজ সেবামূলক এবং পাঠাগারের জন্য একটি ক্লাব গঠন করা হবে। ১৯২৬ এর জুন মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় দাঁতন সমাজ সেবক সমিতি ও সাধারণ পাঠাগার। এই পাঠাগারের দুটি শাখা, একটি গ্রামীণ সাধারণমানুষদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করা অর্থাৎ সমাজ সেবামূলক কাজ অন্যটি পাঠাগার।
আরও পড়ুন- কলেজের ক্লাসে ছাত্রকে বিয়ে করার ভিডিও ভাইরাল, এবার মুখ খুললেন অধ্যাপিকা! কী বললেন জানেন?
শুধু তাই নয়, মানুষের সেবা করার পাশাপাশি, পাঠাগারে গড়ে ওঠে ব্যায়ামাগার। প্রথম পর্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা অনেকেই যুক্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে।শুধু শরীর চর্চা কিংবা পড়াশোনা নয়, এই ব্যায়ামাগারের আড়ালে চলতো ব্রিটিশ তাড়ানোর নানা কৌশল, চলত মিটিং। স্বাভাবিকভাবে প্রায় শতবর্ষের দিকে পা বাড়ানো এই লাইব্রেরীর স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা যথেষ্ট। এরপর ধীরে ধীরে আড়ে বহরে বাড়তে থাকে। বর্তমানে সরকার অধীনস্থ এই লাইব্রেরী। রয়েছে বেশ হাজারও বই, বহু মানুষ এখানে আসেন পড়াশোনোর জন্য।
প্রাচীন নথি ঘেঁটে জানা যায়, এই পাঠাগারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর। তিনি পাঠাগারের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
রঞ্জন চন্দ