দক্ষিণ ২৪ পরগণা জয়নগরের রায় নগর এলাকাতেই বাস ২৫ মৃৎশিল্পী পরিবারের। বংশানুক্রমে প্রতিমা গড়ে আসছে তারা। প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত থাকার কারণে এই গ্রামের নাম পরিবর্তন হয়ে এখন জনমুখে পোটোপাড়া নামেই বেশি পরিচিত। গত দুবছর করোনা মহামারী জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যবসা এমনটাই দাবী করছে মৃৎশিল্পীরা।
আরও পড়ুন: ১০ বছর ধরে চাকরি করলেও কেউ চেনেনই না! বিস্ফোরক দাবি সুকন্যার সহকর্মীদের
advertisement
গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চায়, জয়নগরের পটুয়া পাড়ার মৃতশিল্পীরা কিন্তু আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে কার্যত মাথায় হাত পোটোপাড়ার মৃৎ শিল্পীদের। তাই পুজোর আগে অর্ডার এলেও মুখে হাসি নেই তাঁদের। করোনার কোপ সরাসরি এসে পড়েছে প্রতিমা শিল্পীদের উপর। আসলে প্রতিমার বাজেট বাড়াতে চাইছেন না পুজো উদ্যোক্তারা। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা।
প্রসঙ্গত করোনার কোপে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাজারে এবার জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। মানুষের হাতেও টাকা নেই। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি মেতেছে শ্রেষ্ঠ উৎসব পালনে। গতবার পুজো বড় করে না হলেও বায়না মিলেছিল প্রতিমা শিল্পীদের। সঠিক দামও কিছুটা মিলেছিল। তবে এবার পরিস্থিতি অন্যরকমের। করোনিবিধি মেনেই বেশ বড় করে দুর্গোৎসব পালনের পক্ষেই পুজো কমিটিগুলো। সরকারি সাহায্য মিললেও বাজেট কমেছে বলেই জানাচ্ছে পুজো কমিটিগুলো। তাই প্রতিমা কিনতে এসে অল্প দামের প্রতিমা খুঁজছেন তাঁরা, বলে জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
আরও পড়ুন: ৩১৯ বছরের ঐতিহ্য, চাকদহের খেদাইতলার মনসা মেলার মাহাত্ম রোমহর্ষক
এ দিকে প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দাম আকাশ ছোঁয়া। ৫০ টাকার খড়ের আঁটির দাম এ বার ৯০ টাকা। একটা বাঁশের দাম ১৫০ টাকা। যা গতবার ছিল ৮০-৯০ টাকা। ১২০ টাকার সুতলির এবার দাম হয়েছে ১৭০ টাকা। এক বস্তা মাটির দাম ৯০-১১০ টাকা। যা গতবার ছিল ৭০ টাকা। শুধু তাই নয়। প্রতিমাকে সাজানোর নানা উপকরণের দামও বেড়েছে। যা কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। তাই পরিবহণ খরচও বেড়েছে। তেমনি আবার প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মজুরিও। দু’বছর আগে দৈনিক লেবার চার্জ ৩০০-৩৫০ টাকা ছিল। এখন সেই চার্জ ৭০০-৭৫০ টাকা। তাই প্রতিমা তৈরিতে স্বামীর সঙ্গে হাত লাগাচ্ছেন বাড়ির কর্ত্রীরাও। সবমিলিয়ে প্রতিমা তৈরির খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলেই দাবি মৃৎশিল্পীদের। অথচ সেই জায়গা থেকে প্রতিমার বায়না এলেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। প্রতিমা তৈরি করেও সেরকম লাভের মুখ দেখছেন না তাঁরা। দামি বড় প্রতিমা তৈরি হয়ে পড়ে আছে ঘরে। এতে সমস্যায় পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। যে কারণে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবেও মুখে হাসি নেই প্রতিমা শিল্পীদের। জয়নগরের এক মৃৎশিল্পী ক্ষুদিরাম নস্কর বলেন, প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম ব্যাপক বেড়েছে। অথচ পুজো কমিটিগুলো পুরনো দামে প্রতিমা কিনতে আসছে। পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতিমার বাজেটের দাম না বাড়ানো, প্রতিমা তৈরির খরচ বৃদ্ধি, এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের রায় নগরের প্রতিমা শিল্পীরা।
সুমন সাহা