সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দারা অধিকাংশই মৎস্যজীবী। মাছ ধরার কারণে তাঁদের মাঝে মধ্যেই বাঘের হামলার মুখে পড়তে হয়। সেই হামলা থেকে বাঁচতে ঠাকুরকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করেন। তাঁদের সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের সোনার ঠাকুর বিক্রি করার প্রলোভন দেখানো হত। তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য ঠাকুরের হাত দেওয়া হত যা ছিল সোনার। সেই হাত নিয়ে সোনার দোকানে গিয়ে পরীক্ষা করালে তাঁদের আরও বিশ্বাস জন্মাত। সেই সুযোগ নিয়েই মোটা টাকায় সোনার ঠাকুর বিক্রির প্রলোভন দেওয়া হত। বিশ্বাস জন্মে যাওয়ায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে অনেকেই এই ঠাকুর কিনতে রাজি হতেন। তারপর নির্দিষ্ট জায়গায় যখন তাঁরা প্রতিমা নেওয়ার জন্য হাজির হতেন, তখন তাঁদের সর্বস্ব লুঠ করে পালিয়ে যেত দুষ্কৃতীরা।
advertisement
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের আগে এই ধরনের প্রতারণা চক্রের বাড়বাড়ন্ত দেখা দিয়েছিল এই এলাকায়। তখন পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চক্রে জড়িত থাকায় মোট ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। তারপর এই প্রতারণা চক্র কিছুদিন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বলি সুপারস্টার হয়েও ১০ টাকায় বিয়ে! আমিরের প্রথম বিয়ের গল্প শুনলে চমকে যাবেন
এই বিষয়ে কুলতুলি থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়েছে। এই প্রতারণা চক্রকে ধরতে কুলতুলি থানার আইসি অর্ধেন্দু শেখর দে সরকারের নেতৃত্বে একটি ফাঁদ তৈরি করা হয়। খরিদ্দার সেজে ঠাকুর কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী বুধবার দুপুরে জামতলা মোড়ে দেখা করার সময় স্থির হয়। আগে থেকেই সিভিল পোশাকে মোতায়েন ছিল পুলিশ। হঠাৎ করেই জায়গা পরিবর্তন করা হয়। জালাবেড়িয়া মোড়ে দেখা করার কথা বলা হয়। গ্রাহক জালাবেড়িয়া বাজারে পৌঁছলেই পুলিশও পৌঁছে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে পালানোর ছক করে দুষ্কৃতীরা।
বাইকে ধাওয়া করে কুলতুলি থানার পিসি ইনচার্জ এক অভিযুক্তকে ধরে ফেলে। তালিমুল এই চক্রের মুল পান্ডা বলে জানা গিয়েছে। তার কাছ থেকে একটি ওয়ান সাটার, লাইভ কার্তুজ, একটি বাইক ও দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে আজ বারুইপুর আদালতে পেশ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।
বারুইপুর পুলিশ জেলার এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস জানান, এই ঘটনায় একটি বড় চক্র রয়েছে। তারা ঘটনার তদন্ত করছেন। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এলাকায় এই প্রতারণা চক্র ফের সক্রিয় হওয়ায় পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কুলতুলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল।
এসডিপিও জানান, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে ।তালিমুল সরদারকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে এই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তার খোঁজ চালানো হচ্ছে।
অর্পণ মণ্ডল